‘জাতীয় অবমাননা দিবসে’ পানছড়িতে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের গণসমাবেশ

0

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘জাতীয় অবমাননা দিবসে’ খাগড়াছড়ির পানছড়িতে গণসমাবেশ করেছে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ।

আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) পানছড়ির পুজগাং এলাকায় সহস্রাধিক মানুষের অংশগ্রহণে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আত্মসমর্পনের জাতীয় কলঙ্ক মোচন করতে সংগ্রাম করুন” এই স্লোগানে সমাবেশের আগে একটি মিছিল পুজগাং এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক অনিল চন্দ্র চাকমার সভাপতিত্বে ও সাবেক মহিলা মেম্বার মানিক পুদি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জনপ্রতিনিধি কনক বরন চাকমা এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক বরুন চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি শান্ত চাকমা।

এছাড়া সমাবেশে ১ নং লোগাং ইউনিয়ন, ২নং চেঙ্গী ইউনিয়ন, ৩ নং পানছড়ি সদর ইউনিয়ন ও ৪ নং লতিবান ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।


সমাবেশে জনপ্রতিনিধি কনক বরন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি একটি অসম্পূর্ণ চুক্তি। এ চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে।

তিনি তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, অধিকার কাউকে দেয় না, অধিকার ছিনিয়ে আনতে হয়। তাই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন উদীয়মান তরুণ প্রজন্মকে নতুন উদ্যমে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, শত শত বছর ধরে চলা পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগ্রামকে তরান্বিত করতে ক্ষমতার উৎস জনগণকে আরো সচেতন হয়ে আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

যুবনেতা বরুন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আজকের এই দিনে ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের অন্যায় ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করার বীরত্বপুর্ণ ইতিহাস রয়েছে ছাত্র সমাজের কাছে। ছাত্র সমাজের এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে মুছে দিতে ধুর্ত শেখ হাসিনার সরকার জনসংহতি সমিতির অস্ত্রসমর্পনের দিন হিসেবে ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারিকে বেঁছে নেয়। ছাত্র সমাজের এই গৌরবোজ্জ্বল দিনেই জুম্ম জনগণের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে আপোষের পাড়ে আছড়ে পড়ে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতি ঘটেছিল। এদিন সন্তু লারমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতির আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণের তিলে তিলে গড়ে ওঠা আশা আকাঙ্কা চুর্ণ করে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার কাঙ্খিত স্বপ্ন স্বায়ত্বশাসন আন্দোলনর অপমৃত্যু ঘটে।

বরুন চাকমা আরো বলেন, চুক্তির ২৭ বছর পরেও চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনসংহতি সমিতির যেমন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, একইভাবে আওয়ামিলীগ সরকারও চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে কোন সদিচ্ছা দেখায়নি। বরং উভয় পক্ষ চুক্তির সমালোচনাকারীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্ণয় করে উদীয়মান নেতৃত্বদের হত্যার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে স্তব্দ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়ে। জেএসএস চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে জনগণকে সংগঠিত করতে না পেরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে খুন-গুম, অপহরণ, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে।

ছাত্রনেতা শান্ত চাকমা বলেন, ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত চুক্তির পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবর্তন ঘটে। চুক্তির পরবর্তী দুই পক্ষই ভিন্নভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করলেও কার্যত চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উল্টো চুক্তির সমালোচনাকারীদের হত্যা ও অগণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে নিজের দুর্বলতাকে অস্বীকার করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ১৯৯৮ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে সন্তু লারমার নেতৃত্বে শান্তিবাহিনী সদস্যদের অস্ত্রসমর্পণের দিনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সেটলারদের অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে পুনর্বাসন করা হবে বলে বক্তব্য দেয়ার পরও সন্তু লারমা তথা জেএসএস হাসিনার কুটকৌশল ধরতে পারেনি।

শান্ত চাকমা আরো বলেন, চুক্তির মাধ্যমে জুম্ম জনগণের অধিকার আদায় হয়নি। শুধুমাত্র যারা অস্ত্রসমর্পন করেছেন তারাই বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পেরেছেন। জুম্ম জনগণের যে দুর্দশা তা আরো তীব্রভাবে ঘনীভূত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুনভাবে সমস্যা সৃষ্টি করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে অনিল চন্দ্র চাকমা বলেন, আমরা যে অধিকারের জন্য লড়াই সংগ্রাম করছি সেই অধিকার অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। জুলাই গণআন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ভেবে ছিলাম সারা দেশের ন্যায় পাহাড়েও অবস্থার পরিবর্তন হবে। কিন্তু কোন পরিবর্তন হয়নি। আমরা আশা করে ছিলাম বৈষম্যহীন শোষনহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু পাহাড়ে এখনও জাতিগত বৈষম্য চলমান রয়েছে। তাই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য লড়াই সংগ্রাম করতে হবে। লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More