খাগড়াছড়ি॥ সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট জেএসএস সংস্কারবাদীদের চাঁদা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বেশ কয়েকটি সংগঠন একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেছে। এতে তাদেরকে ‘জাদর মাধাখেইয়্যা’ বা জাতির অনিষ্টকারী ও ‘ঘর উন্দুর’ অর্থাৎ জাতীয় বিশ্বাসঘাতক বিভীষণ-মীরজাফর আখ্যায়িত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সংস্কারবাদীরা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে প্রত্যেক গ্রাম থেকে মুরুব্বীদের ডেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার জন্য তারা এই চাঁদা আদায় করছে বলে তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে। এতে লোকজনের মধ্যে প্রচ- ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ১০টি সংগঠন সংস্কারবাদীদের চাঁদা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ১০ জুলাই উক্ত প্রচারপত্র প্রকাশ করে।
‘আপামর জনগণের প্রতি আহ্বান: সেনাবাহিনীর দোসর জুম্ম রাজাকার জেএসএস সংস্কারবাদীদের চাঁদা দেবেন না’ শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত লিফলেটে চাঁদা না দেয়ার জন্য ৭টি কারণ দেখানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,
‘সংস্কারবাদীরা জনগণের পক্ষে এযাবত কোন আন্দোলন করেনি, এখনও করছে না, ভবিষ্যতেও করবে বলে মনে হয় না। কাজেই আপনারা যদি তাদেরকে কোন চাঁদা দেন তাহলে সে টাকা আন্দোলনের জন্য অথবা কোন ভালো ও মঙ্গলজনক কাজের জন্য খরচ হবে না।
আপনাদের দেয়া চাঁদায় তারা আবার অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনবে, সে কথা তারা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে। তারা আপনাদের দেয়া টাকায় অস্ত্র কিনে সেই অস্ত্র দিয়ে আপনাকে অথবা আপনার ভাই, বন্ধু অথবা আত্ত¥ীয়স্বজনকে খুন করবে। অর্থাৎ আপনাদের দেয়া টাকায় কেনা অস্ত্র ব্যবহৃত হবে জনগণের বিরুদ্ধে, আপনার-আমার বিরুদ্ধে।
কাজেই সংস্কারবাদীদের চাঁদা দেয়া মানেই হলো জ্ঞাতিভাইদের হত্যার কাজে সহযোগিতা করা। আপনার-আমার টাকা দিয়ে তারা আপনাকে-আমাকেই সর্বনাশ করবে, আমাদের জাতির সর্বনাশ করবে।’
‘‘জাদর মাধাখেইয়্যাদের’ (জাতির অনিষ্টকারীদের) কাছে মাথা নত’ না করার আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্রে আরও বলা হয়, ‘তাদের (সংস্কারবাদীদের) টিকে থাকার এখন একমাত্র অবলম্বন হলো লোকজনকে ভয়ভীতি দেখানো। এটা তাদের কোন সবল দিক নয়, বরং এক মহাকরুণ অবস্থা। আসলে তাদের অপকর্ম ও আর্মিদের স্পইয়ে পরিণত হওয়ার কারণে তারা সর্বত্র এবং সবার কাছে ঘৃণিত, নিন্দিত, ধিকৃত ও প্রত্যাখ্যাত। জনগণের সংগঠিত প্রতিরোধের ফলে তারা সবখানে ও সব ক্ষেত্রে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনীর সাহায্য ছাড়া তারা টিকে থাকতে পারছে না। তাদের প্রায় সবাইকে বাজারে সেটলার পাড়ায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। তাদের সশস্ত্র গ্রুপগুলো পর্যন্ত সেটলার পাড়া ও সেনা ক্যাম্পের কাছাকাছি এলাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক সংস্কারবাদী ইউপিডিএফের সাথে বোঝাপড়া করে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে অথবা ইউপিডিএফের পক্ষে কাজ করছে। অনেকে সম্পত্তিসহ স্বপক্ষ ত্যাগ করে ইউপিডিএফের কাছে ভিড়েছে। এ কারণে বর্তমানে সংস্কারবাদীদের মধ্যে চরম সন্দেহ ও অবিশ^াস বিরাজ করছে।’
সংস্কারবাদীদের হুমকিতে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে উক্ত প্রচারপত্রে বলা হয়, ‘যেখানেই জনগণ ভয়কে জয় করে সংঘবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছে সেখানেই তারা সফল হয়েছে এবং গণশত্রুরা পরাজিত হয়েছে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে ‘জনগণ সাহসের সাথে দাঁড়ালেই অন্যায়কারীরা ‘ভুত্তো’ কুকুরের মতো পালানোর পথ’ পায় না।’
শেষে সংস্কারবাদীদের চাঁদা না দেয়ার কারণে যদি ‘কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তাহলে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তার জন্য’ সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যেসব সংগঠনের নামে উক্ত প্রচারপত্র ছাপা হয়েছে সেগুলো হলো অবসরপ্রাপ্ত পাহাড়ি চাকুরিজীবী কল্যাণ সমিতি, জুম্ম ঠিকাদার সংসদ, জুম্ম ছাত্র-যুব-নারী ঐক্য পরিষদ, পাহাড়ি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি, মহাজনপাড়া সমাজ উন্নয় সংঘ, খাগড়াপুর যুব কল্যাণ সমিতি, মধুপুর মহিলা সমবায় সমিতি, ত্রিপুরা ছাত্র-যুব সংঘ, প্রগতিশীল মারমা ছাত্র ঐক্য পরিষদ, সামাজিক শৃঙ্খলা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ-প্রতিরোধ কমিটি।
নীচে লিফলেটটির স্ক্যান কপি দেওয়া হলো:
——————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।