খাগড়াছড়ি ও মহালছড়ি প্রতিনিধি ।। গতকাল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির আলুটিলায় সংস্কারবাদী জেএসএস সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ইউপিডএফ সদস্য জ্ঞানেন্দু চাকমার লাশ নিয়ে নানা টালবাহানা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে সামাজিক-ধর্মীয় রীতিনীতি ছাড়াই লাশটি দাহ করেছে সেনা-পুলিশ সদস্যরা।
লাশটি গ্রহণ করতে তার পরিবারের লোকজন আজ শুক্রবার (১৩ জুলাই ২০১৮) সকালে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল আসেন। সেখানে লাশের জন্য অপেক্ষা করার সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংস্কারবাদী সন্ত্রাসীরা এসে নিহত জ্ঞানেন্দু চাকমার ছোট ভাই কালায়ন চাকমাকে অপহরণ করে তেঁতুলতলায় নিয়ে গিয়ে মারধর করার পর ছেড়ে দেয়।
এদিকে লাশটি যাতে বাড়িতে (মহালছড়ির যাদুগা নালায়) নেয়া না হয় সেজন্য সংস্কারবাদীরা পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনকে নানাভাবে হুমকি দেয়ার কারণে তারা লাশটি বাড়িতে না নিয়ে খাগড়াছড়ি শহরের উত্তর খবংপুজ্জে শ্মশানে দাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পোস্টমর্টেম শেষে পুলিশ লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার আশ্বাস দিলে পরিবারের লোকজন লাশের দাহক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। কিন্তু জ্ঞানেন্দুর বড়ভাই লাশ গ্রহণ করতে হাসপাতালে গেলে পুলিশ লাশ হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ পরবারের কাছে লাশটি হস্তান্তর না করে সরাসরি মহালছড়িতে নিয়ে যায়। তারা জ্ঞানেন্দু চাকমার বড় ভাইসহ আরো তিন জন পাহাড়িকে তাদের সাথে যেতে বাধ্য করে। সেখানে নেয়ার পর লাশটিকে মহালছড়ি উপজেলার ২৪ মাইলের মারমা সম্প্রদায়ের একটি শ্মশানে নিয়ে দাহ করার চেষ্টা করে। এ খবর পেয়ে মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন সামাজিক নিয়ম অনুসারে তাদের শ্মশানে বাইরের কোন লোককে দাহ করা যায় না জানিয়ে লাশ দাহ করতে বাধা প্রদান করলে সেখানে লাশটির দাহকার্য সম্পন্ন করতে পারেনি।
পরে অর্ধপোড়া লাশটিকে সেখান থেকে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কের সিন্দুকছড়ি রাস্তার পার্শ্ববর্তী হাজাছড়া নামক একটি স্থানে চাকমাদের শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও অনুমতি ব্যতীত শ্মশানে লাশ দাহ করা নিয়ে এলাকার লোকজন আপত্তি জানালে “কংজরী মারমা” নামে সেনাবাহিনীর এক সোর্স কয়েকজন নারীকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এরপর সেনা-পুলিশ ওই এলাকাটি ঘিরে রাখে। কাউকে আর সেখানে ঢুকতে ও ছবি তুলতে দেয়নি। পরে কোন প্রকার ধর্মীয়-সামাজিক রীতিনীতি ছাড়াই খাগড়াছড়ি থেকে লাশের সাথে নিয়ে যাওয়া তিন জন পাহাড়িকে লাশটির দাহ কার্য সম্পন্ন করতে বাধ্য করে।
এদিকে, লাশ নিয়ে প্রশাসনের এমন টালবাহানা ও পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে সামাজিক রীতিনীতি ছাড়াই সেনা-পুলিশ কর্তৃক লাশ দাহ করার ঘটনায় এলাকাবাসী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা এ ঘটনাকে সামাজিক-ধর্মীয় রীতিনীতির উপর চরম আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন।
——————-
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।