ঢাকায় সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশী হামলার প্রতিবাদে সাজেকে বিক্ষোভ

0

বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

“সাম্প্রদায়িকতা, জাতি-বিদ্বেষ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান” শ্লোগানে ঢাকায় সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার ওপর “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির” বর্বর হামলা ও তার প্রতিবাদে সংক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতার আয়োজিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার ও স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামক ফ্যাসিস্ট সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বাঘাইছড়ির সাজেকে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ।

আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি ২০২৫) সকাল থেকে বাঘাইহাট, বঙ্গলতলীসহ বিভিন্ন এলাকার বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা সাজেক পর্যটন সড়কের লাদুমুনি বাজারে জমায়েত হন। পরে সকাল ৯টার সময় তারা মিছিল নিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে উজোবাজারে সমাবেশে মিলিত হন।

মিছিলে তারা “ফ্যাসিস্ট “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি”কে নিষিদ্ধ কর; পুলিশের ফ্যাসিস্ট আচরণ বন্ধ কর; উগ্রসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন; পাহাড় থেকে সেনাশাসন তুলে নাও; পাহাড় ও সমতলে, লড়াই হবে সমান তালে; পাহাড়ে গণতান্ত্রিক শাসন চাই; Sovereignty কারোর বাপদাদার সম্পত্তি নয়” ইত্যাদি শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও শ্লোগান দেন।

বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ছাত্র জনতার সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্ঠা কমিটির সহসভাপতি নতুন জয় চাকমার সভাপতিত্বে ও সুপন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বাবু ধন চাকমা ও সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির অন্যতম সদস্য ধারশ চাকমা।

বাবুধন চাকমা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও আমরা এখনো নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছি না। তাই জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে টিকে থাকতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন করতে হবে এবং আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

তিনি বলেন, গত ২ দিন আগে ঢাকায় স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামক উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালিয়ে ১০-১৫ জনকে আহত করেছে। সেই হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকায় সংক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে। এসব ঘটনাই প্রমাণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর জন্য সহায়ক নয়।

বাবুধন চাকমা আরো বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের নিপীড়নের কথা সকলে জানি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর আমরা আশা করেছিলাম বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও কিছুটা হলেও শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্ত সেটা হয়নি। আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত বছর ১৯-২০ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর হামলা, হত্যা ও ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা।  তাই আমাদের নিজেদের রক্ষার জন্য সকল জাতিসত্তাকে সংগঠিতভাবে আন্দোলন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

তিনি সবাইকে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

বাবুধন চাকমা সমাবেশ থেকে ফ্যাসিস্ট সংগঠন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবনের সামনে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা, পুলিশের ফ্যাসিস্ট আচরণ বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি তুলে ধরেন।

ধারশ চাকমা বলেন, আন্দোলন ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকার কোন অবস্থা নেই। তিনি জাত রক্ষার জন্য সংগঠিত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোল গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

জুমচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জ্যোতি লাল চাকমা বলেন, আমরা ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি দেখেছি ঢাকায় উগ্র সাম্প্রদায়িক বাঙালি ও পুলিশ কিভাবে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, ৭১ সালে স্বাধীনতার পর ৮০’র দশকে দেশের সমতল অঞ্চল থেকে সেটলার বাঙালিদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে আমাদের পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখল করা হয়েছে। আমাদের উপর একের পর এক হামলা চালানো হয়েছে। শাসকগোষ্ঠি কর্তৃক আমাদের প্রতিনিয়ত নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। আমাদের আর পিছনে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের টিকে থাকতে হবে।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যে সেটলার বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন, ভূমি বেদখল করছে, এখন তারা ঢাকার বুকেও হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ হামলাকারীদের কোন কিছুই করছে না। উল্টো হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে গতকাল পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য রয়েছে। শাসকগোষ্ঠি নিপীড়ন-নির্যাতন, খুন-গুম, ভূমি বেদখলসহ নানাভাবে আমাদেরকে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, লড়াই সংগ্রাম করতে পারি তাহলে কোনদিন আমাদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারবে না।

জ্যোতি লাল চাকমা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়েও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, গত জুলাই আগস্টের গণঅভ্যত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে আমরা ভেবেছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ কিছুটা হলেও শান্তিতে থাকতে পারবে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কয়েকদিন পরই দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে আমরা পাহাড়িরা হামলার শিকার হয়েছি। আমাদেরকে এখন হাসিনা সরকারের সময়ের চেয়েও বেশি নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

নতুন জয় চাকমা বলেন, পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার সকলের রয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদেরও নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ বলা হয়। কিন্তু এই বাংলাদেশে আমাদের কোন স্বাধীনতা নেই। যদি সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ হতো তাহলে দেশের নাগরিক ও জাতি হিসেবে আমরাও নিজেদের অধিকার নিয়ে সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করতে পারতাম। কিন্তু আমরা সে পরিবেশ পাচ্ছি না। আমাদের প্রতিনিয়ত নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। ধর্মীয়ভাবেও আমরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছি। তিনি সম্প্রতি রাঙামাটির বন্দুকভাঙায় যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র এলাকায় সেনা ক্যাম্প নির্মাণের জন্য ১৫০টির মতো সুপারি গাছ কেটে দেয়ার ঘটনা এবং খাগড়াছড়ি সদরে একটি বৌদ্ধ বিহারের ঘেরাও করে তল্লাশি ও বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হেনস্তার ঘটনা তুলে ধরেন।

নতুন জয় চাকমা বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে। যদি সেটা করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম টিকে থাকতে পারবে না। সেজন্য তিনি অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More