কলেজ ছাত্রী ইতি চাকমা খুনীদের গ্রেফতার, সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে

ঢাকায় তিন সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

0
ঢাকা : খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ইতি চাকমা হত্যার প্রতিবাদে ৩ মার্চ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম। সমাবেশে দেশের বাম প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।0000
 
বিকাল সোয়া তিন টায় সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ের পর মুধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল শুরু হয়। এরপর কলাভবন, বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী চত্বর হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি সড়ক দ্বীপ প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
 
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা রোনাল চাকমা। বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ ঢাকা ইউনিট সংগঠক মাইকেল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক বরুণ চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী নীতি শোভা চাকমা।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র ঢাকা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন চাকমা।
 
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক আতনাফ আতিফ অনিক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর যুগ্ম সহ আহ্বায়ক ইকবাল কবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, ছাত্র ফ্রন্ট (খালেকুজ্জামান) সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স, ল্যাম্পপোস্টের সংগঠক নাহিদা সুলতানা লিসা, নারী মুক্তি কেন্দ্রের নেত্রী দীপা সাহা ও সুজন বিপ্লব প্রমুখ।
2222
এছাড়াও সংহতি জানিয়েছেন ছাত্র গণমঞ্চ, জাতীয় ছাত্রদল, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম (টিএসএফ), প্রগতিশীল মারমা ছাত্র সমাজ (প্রমাছাস) ও বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ও ক্রিশ্চিয়ান ত্রিপুরা স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন।
 
সমাবেশ থেকে বক্তাগণ অবিলম্বে ইতি চাকমা খুনীদের গ্রেফতার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
 
বক্তরা বলেন পিসিপি, এইচডব্লিউএফ ও ডিওয়াইফএফ এর দাবীগুলো খুবই যৌক্তিক। এক দেশে দুই ধরণের নীতি থাকতে পারে না। সরকার পাহাড় এবং সমতলের দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা জারি রেখেছে। এ দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করে নেতৃবৃন্দ বলেন পাহাড়ে সেনা শাসন জারি থাকবে আর সমতল চলবে সিভিল প্রশাসন দিয়ে, এটা হতে পারে না।
বক্তারা সংবিধানের পঞ্চদম সংশোধনী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ১১ দির্দেশনারও কঠোর সমালোচনা করেন। এবং একই সাথে সংবিধানে স্ব স্ব জাতিসত্তার স্বীকৃতি প্রদানেরও জোর দাবী জানান।
 
বক্তরা অভিযোগ করে বলেন, সেনাবাহিনী পাহাড়ে ভূমি বেদখলসহ সকল ঘটনার ইন্ধন যুগিযে আসছে। গত ১ মার্চ ইতি চাকমা খুনীদের গ্রেফতারের দাবীতে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশেষ সংস্থার লোকজন খাগড়াছড়ি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষকে দিয়ে ছাত্রীদের উপর চাপ প্রয়োগ এবং ভবিষ্যতে কেউ প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ না নেয়ার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। এমনকি পরবর্তীতে কেউ অংশগ্রহণ করলে কলেজ থেকে বহিস্কার করারও হুমকি দেয়া হয়েছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
1111
বক্তারা বলেন, দেড় যুগের বেশী সময় পরও কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উক্ত ঘটনায় সেনাবাহিনী সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। সেই তদন্ত ও বিচার নিয়ে সরকার এখনো তালবাহানা চালাচ্ছে। ফলে পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় মদদে একের পর এক নারী ধর্ষণ, গুম, হত্যার ঘটনা ঘটে চলছে। শুধু তাই নয়, সমতলেও নারী নির্যাতন খুন ধর্ষণ ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। কল্পনা, ইয়াসমিন, সবিতা, থুই ম্রা চিং, তনু ও ইতিসহ সারা দেশে শত শত নারী নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে এবং প্রায় প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার কোনটাই আজ পর্যন্ত কোন সরকার করেনি। তাই সমাবেশ থেকে সকল নেতৃবৃন্দ এর বিরুদ্ধে পাহাড় এবং সমতলে সকল প্রগতিশীল প্রতিবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
 
সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী যোগদান করেন। এছাড়াও বিভিন্ন পেশার জনগণও অংশগ্রহণ করেন।

——————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More