ঢাকায় বিপ্লবী নেতা হো চি মিনের ৪৫তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত
সিএইচটিনিউজ.কম

মহান বিপ্লবী হো চি মিনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সভার সঞ্চালক পিসিপি ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিনয়ন চাকমা বিপ্লবী হো চি মিনের ঘটনাবহুল দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন তুলে ধরেন। এ বিশেষ দিনে দেয়ালে টাঙানো হো চি মিনের প্রতিকৃতি ছিল ফুলে শোভিত। এ সময় লাল জমিনের ব্যানারের ওপর উজ্জ্বল হলুদ বর্ণে হো চি মিনের উক্তি ‘মুক্তি ও স্বাধীনতার চেয়ে কোন কিছুই অধিক মূল্যবান নয়’ শোভা পাচ্ছিল। ব্যানারে আরও লেখা ছিল, ‘সফল বিপ্লবীদের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করুন’।
১৮৯০ সালের ১৯ মে ফরাসি উপনিবেশিক শাসনাধীনে বিপ্লবী নেতা হো চি মিনের জন্ম হয়েছিল। হো চি মিনের নেতৃত্বে ১৯৩০ সালে গঠিত হয়েছিল ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টি (যা পরে ইন্দোচীন কমিউনিস্ট পার্টি নামে পরিচিত হয়)। তার অনুপ্রেরণায় গঠিত হয়েছিল ভিয়েতনামী গণফৌজ। বলতে গেলে ভিয়েতনামী জনগণের মুক্তি সংগ্রামে সারা জীবন কঠিন সংগ্রাম করেছিলেন হো চি মিন। তিনি ছিলেন সবার প্রিয় ‘আঙ্কেল হো’ অর্থাৎ ‘প্রিয় কাকা’। মুক্তি সংগ্রাম সংগঠিত ও নেতৃত্ব দিতে তিনি প্রতিবেশী চীন, ফ্রান্সসহ সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেছিলেন। তৃতীয় আন্তর্জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪১ সালে তিনি ভিয়েত মিন গঠন করে আন্দোলন জোরদার করার পদক্ষেপ নেন। ১৯৪৫-১৯৫৫ সালে উত্তর ভিয়েতনাম (গণপ্রজাতন্ত্রী ভিয়েতনাম)-এর প্রধানমন্ত্রী ও পরে ১৯৫৫-১৯৬৯ সালে গোটা ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ৭৯ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ৮গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির সচিব অংগ্য মারমা তার আলোচনায় বিপ্লবী হো চি মিনের নেতৃত্ব, বিপ্লবী পার্টি এবং ভিয়েতনামী জনগণের মুক্তি সংগ্রামের শিক্ষণীয় দিকসমূহ তুলে ধরেন। ফ্রান্স ও জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছিল ভিয়েতনামী জনগণকে। আমেরিকার মত পরাশক্তিকে ভিয়েতনামীরা পরাস্ত করে নিজেদের দেশকে একত্রীত করেছিল। ভিয়েতনামকে বিভক্ত করে দুর্বল রেখে শাসন-শোষণ চালাতে ফ্রান্স ও আমেরিকা দক্ষিণ ভিয়েতনামে তাঁবেদার পুতুল সরকার গঠন করে দিয়েছিল। আকাশ থেকে বৃষ্টির মত বোমা বর্ষণ, নাপাম বোমায় ক্ষেত-খামার ধ্বংস ও বিষাক্ত করে দিয়েও অদম্য সংগ্রামী ভিয়েতনামীদের আমেরিকা পরাস্ত করতে পারে নি। ভিয়েতনামী বিপ্লবীদের ইস্পাত কঠিন সংগ্রামী মনোবল ও দৃঢ়তার কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হেরে গিয়েছিল। ৫ লক্ষের অধিক সৈন্য, বিপুল সমর সজ্জা-কামান-মারাণস্ত্র-যুদ্ধ জাহাজ-বিমান সব কিছু থাকা সত্ত্বেও মার্কিন সৈন্যরা বিপ্লবী মন্ত্রে উজ্জীবিত ভিয়েতনামী মুক্তি ফৌজের হাতে পরাস্ত হয়। ৫৮ হাজারের অধিক মার্কিন সৈন্য প্রাণ হারায়, অজ্ঞাত সংখ্যক সৈন্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। ১৯৫৪ সালে শক্তিশালী দিয়েন বিয়েন ফু ঘাঁটি পতনের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের কর্তৃত্বের অবসান ঘটেছিল। সর্বশেষ ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল সায়গন পতনের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামীদের নিকট পরাজয় বরণ করে।
প্রযুক্তি, সামরিক ও অর্থনৈতিক সকল দিক দিয়ে ফ্রান্স, জাপান ও আমেরিকার তুলনায় ভিয়েতনামের শক্তি ছিল নগণ্য। কিন্তু ভিয়েতনামীদের শক্তির উৎস ছিল বিপ্লবী মন্ত্র, বিপ্লবী দর্শন, সঠিক পার্টি ও নেতৃত্ব। সে কারণে ফ্রান্স, জাপান ও আমেরিকার মত অসম শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে ভিয়েতনামী জনগণ উপনিবেশিক শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত হতে সক্ষম হয়। মুক্তি ও স্বাধীনতার লড়াইয়ে ভিয়েতনাম একটি আলোচিত অধ্যায়। বিশ্বের অধিকারহারা নিপীড়িত ও নিযাতিত মানুষের ভিয়েতনামীদের কাছ থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। সাধারণ ধারণা রাখার জন্যও ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রাম ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিত বলে আলোচকগণ মন্তব্য করেন।
—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।
—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।