খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : দীঘিনালায় উপজেলার নয় মাইলে কৃত্তিকা ত্রিপুরা(পুর্ণাতি) নামে ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিশুকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার (৩১ জুলাই ২০১৮) খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল(বিএমএসসি) খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখা ও ত্রিপুরা ছাত্র-যুব ফ্রন্ট(টিওয়াইএসএফ) খাগড়াছড়ি সদর থানা শাখার যৌথ উদ্যোগে আজ সোমবার (৩০ জুলাই) অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে আজ সকাল ৯টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি মহাজন পাড়া, শাপলা চত্ত্বর হয়ে প্রেস ক্লাব সামনে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএমএসসি খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার সভাপতি মংচিংহ্লা মারমা, সহ-সভাপতি উষাপ্রু মারমা, সাধারণ সম্পাদক নিঅং মারমা, সদস্য খেংচেংপ্রু মারমা, টিওয়াইএসএফ সদর থানা শাখার সভাপতি প্রদীপ ত্রিপুরা, সরকারি কলেজ শাখা সদস্য আকাশ ত্রিপুরা। এছাড়া এতে সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)খাগড়াছড়ি জেলা শাখা দপ্তর সম্পাদক সমর চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য এন্টি চাকমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট-এর প্রতিনিধি কবির হোসেন প্রমূখ।
সমাবেশে সঞ্চালনা করেন, বিএমএসসি জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক ক্যপ্রু মারমা।
সমাবেশে বিএমএসসি’র জেলা সভাপতি মংচিংহ্লা মারমা বলেন, স্বাধীন দেশে বসবাস করেও আমাদের পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। কৃত্তিকা ত্রিপুরা একজন শিশু। মাত্র ৫ম শ্রেণীতে পড়ছে। তার কি অপরাধ ছিল যে তাকে ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্রের আঘাত ক্ষত-বিক্ষত করে নির্মমভাবে হত্যা করতে হবে। তিনি বলেন, ধর্ষণকারী অপরাধীরা যেই হোক না কেন তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রশাসন যদি ধর্ষক অপরাধীদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা মনে করবো ঘটনার সাথে প্রশাসনও জড়িত রয়েছে।
তিনি একের পর এক পাহাড়ি নারী-শিশু ধর্ষণ-হত্যা-গুম-অপহরণের যেসব ঘটনা ঘটছে এটা সরকারের জাতি ধ্বংসের অন্যতম কৌশল বলে মন্তব্য করেন।
টিওয়াইএসএফ-এর সদর থানা সভাপতি প্রদীপ ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘটিত সকল ঘটনায় প্রশাসনের দুর্বলতা নতুবা যোগসাজশ রয়েছে। তা না হলে এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতো। প্রশাসন যদি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতো তাহলে এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটানোর সাহস পেত না।
এইচডব্লিউএফ-এর নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রতিনিয়ত নারী ধর্ষণ-নির্যাতন-খুন-গুম-অপহরণের ঘটনা ঘটছে। সরকার জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমাদের বোন কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে নির্মমভাবে ধর্ষণের পর খুনের শিকার হতে হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি নিজেদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার (৩১ জুলাই ২০১৮) খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
বক্তারা অবিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানান। প্রশাসন যদি অপরাধীদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আগামীতে আরো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এছাড়াও এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা শহরের শাপলা চত্ত্বরে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বাত্রিকস), বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম (টিএসএফ), বৃহত্তর নয় মাইল এলাকাবাসী, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি প্রধান শিক্ষক সমিতি, দুর্বার নেট ওয়ার্ক, উইমেন্স রিসোর্ট নেটওয়ার্ক ইত্যাদি সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধন থেকে শিক্ষক নেতারা কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে হত্যার প্রতিবাদে আগামী বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিদ্যালয় থেকে ক্লাশ বিরতির সময় বাড়িতে দুপুরের খাবার খেতে এলে দুর্বৃত্তরা নয় মাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী কৃত্তিকা ত্রিপুরা(পূর্ণাতি)-কে ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্যা করে। বিকালে তার মা জুমের কাজ শেষে বাড়ি ফেরে মেয়েকে না পেয়ে অনেক খোঁজাখুজির পর রাতে বাড়ির নীচের ছড়ার পাশের জঙ্গল থেকে তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
———————
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।