দিঘীনালায় বিজিবি সেক্টর হেডকোয়ার্টার স্থাপনের নামে জমি অধিগ্রহণ না করার দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে পাহাড়িরা

0
দিঘীনালা প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম 
 
খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলার বাবুছড়ায় বিজিবি সেক্টর হেডকোয়ার্টার স্থাপনের নামে জমি অধিগ্রহণ না করার দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে ৫১ নং দিঘীনালা মৌজার যত্ন কুমার কার্বারী পাড়া ও শশী মোহন কার্বারী পাড়ায় বসবাসরত পাহাড়িরা।আজ ৬ অক্টোবর রবিবার উক্ত দুই গ্রামের মুরুব্বীবৃন্দ দিঘীনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে এ স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপি দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন যত্ন কুমার কার্বারী পাড়ার নতুন চন্দ্র কার্বারী, মৃণাল চাকমা ও মহেন্দ্র চাকমা এবং শশী মোহন কার্বারী পাড়ার সন্তোষ কুমার কার্বারী, পূর্ণচন্দ্র চাকমা, বাবুলো কান্তি চাকমা, জগদীশ চাকমা, রামচন্দ্র চাকমা ও সুকেন্দু চাকমা।

স্মারকলিপিতে তারা বলেন, আমাদের কোন মতামত না নিয়ে ১৯৮৫ সালে জোরপূর্বকভাবে আমাদের রেজিষ্ট্রিকৃত জমির উপর বাবুছড়া সেনা ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়। পার্বত্য চুক্তির আলোকে সকল অস্থায়ী ক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও বাবুছড়া ক্যাম্পটি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই আর্মি ক্যাম্পটি স্থাপনের ফলে আমরা মোট ৯ (নয়) পরিবার নিজ বাস্তুভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছি। উক্ত ক্যাম্প এলাকায় আমাদের ৯ (নয়) পরিবারের মোট ১২.৫০ একর সরকারী রেজিষ্ট্রিভুক্ত জমি রয়েছে। ক্যাম্পটি স্থাপনের পর থেকে আমাদেরকে কোন ক্ষতিপূরণ বা জমির কোন প্রকার ভাড়াও দেয়া হয়নি। এই আর্মি ক্যাম্পের মাত্র কয়েকশ’ গজ দূরে পূর্ব দিকে যদি বিজিবি’র সেক্টর হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয় তাহলে দুই গ্রামের আমরা আরো ৪৩ পরিবার বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে ভূমিহীনে পরিণত হবো।

স্মারকলিপিতে তারা আরো বলেন, আমরা ১৯৮৯ সালে তৎকালীন বিরাজমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রিয় মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছিলাম। দীর্ঘ প্রায় ১ দশক পর আমরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্পেশাল এফেয়ার্স বিভাগের মহাপরিচালক এ. এস. এম. মোবায়দুল ইসলাম কর্তৃক স্বাক্ষরিত উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক ২০ (বিশ) দফা প্যাকেজ চুক্তির আওতায় বুকভরা আশা নিয়ে দেশে ফিরে আসি। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয়, ২০ (বিশ) দফা প্যাকেজ চুক্তির দফাসমূহ বাস্তবায়ন তো করা হয়নি অধিকন্তু আমাদেরকে আবারো নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

স্মারকলিপিতে তারা বলেন, ইতিপূর্বে ২০০৫ সালে আমাদের উক্ত জমিতে বিডিআর হেডকোয়ার্টার স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছিল। তখনও আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলাম। কোন প্রকার উপায়ান্তর না দেখে আমরা মোট ১০ (দশ) জন এলাকাবাসী মাননীয় হাইকোর্টে সরকারের এই সিদ্ধান্তের রদ চেয়ে রিট আবেদন করেছিলাম। মাননীয় হাইকোর্ট আমাদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ মে ২০০৫ ইং তারিখে বিডিআর হেডকোয়ার্টার স্থাপনের নিমিত্তে জমি অধিগ্রহণের জন্য জারিকৃত নোটিশটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে সরকারের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন এবং এই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারের জারিকৃত নোটিশটি স্থগিত করে দেন। উল্লেখ্য যে, এই রিট আবেদনটি এখনও মাননীয় হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তাই উক্ত রিট আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার আগে একই জায়গায় বা তার পাশের জমিতে বিজিবি’র স্থাপনার জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রচেষ্টা কেবল দুঃখজনক নয়, তা আদালত অবমাননার সামিল।

স্মারকলিপিতে তারা আরো বলেন, ৫১ নং দীঘিনালা মৌজার যে এলকায় জমি অধিগ্রহণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে তার মোট জমির পরিমাণ ৫৩ (তেপ্পান্ন) একর। তন্মধ্যে উঁচু ভূমি ৩০ (ত্রিশ) একর আর ধান্য জমি ২৩ (তেইশ) একর। উপরোক্ত জমির মালিক হচ্ছে মোট ৪৩ (তেতাল্লিশ) পরিবার। এদের মধ্যে অধিকাংশের জমি সরকারী রেজিষ্ট্রিভূক্ত। যাদের সরকারী রেজিষ্ট্রিভূক্ত জমি নেই বাকী অধিবাসীদেরও ১৯০০ সালের পার্বত্য শাসনবিধির ৫০(১) ধারা মোতাবেক স্থানীয় মৌজা প্রধানের কার্যালয় কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে বসতভিটার জন্য প্রদত্ত বিভিন্ন পরিমাণ জমি রয়েছে। উপরোক্ত জমি ব্যতীত আমাদের আর কোথাও কোন প্রকার জমি নেই। আর কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কোন পেশায় আমরা অভ্যস্ত নই। জমিই হলো আমাদের বাঁচার একমাত্র সম্বল। তাই আমাদেরকে উচ্ছেদ করে বিজিবি’র হেডকোয়ার্টার নির্মিত হলে আমাদেরকে গলা টিপে হত্যার সামিল হবে।

স্মারকলিপিতে তারা ৩ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো:

১. বিজিবি’র সেক্টর হেডকোয়ার্টার নির্মাণের জন্য আমাদের ৫৩ একর জমির অধিগ্রহণ পরিকল্পনা রদ করা হোক।

২. বাবুছড়া ক্যাম্পটি সরিয়ে নিয়ে আমাদের ১২.৫০ একর জমি দখলমুক্ত করা হোক এবং জমির মালিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক।

৩. জুম্ম শরণার্থীদের সাথে সরকারের সম্পাদিত ২০ দফা প্যাকেজ চুক্তি মোতাবেক আমাদেরকে নিজ জমিতে পুনর্বাসন করা হোক।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More