দিঘীনালায় এক পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা

78
9

দিঘীনালা প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম

খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নে সেটলার কর্তৃক এক পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে৷ তার নাম সুনিকা চাকমা ওরফে মিলা ছ, বয়স : ১১, পিতা- মৃত. নম চাকমা, গ্রাম : তুলা পাড়া, কামক্যাছড়া সে কামক্যাছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী গতকাল ১৩ মে শুক্রবার সকালে জিয়া নগর থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ

সুনিকার মা কল্পনা চাকমা বলেন, গত ১২ মে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় খানা-দানা খেয়ে আমরা বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছি৷ এ সময় পাশের গ্রাম থেকে রাঙাচান চাকমা আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে৷ সে আমার মেয়েকে সিগারেট কিনে আনতে পার্শ্ববর্তী শফির দোকানে পাঠিয়ে দেয়৷ দীর্ঘক্ষণ পরও মেয়েটি বাসায় ফিরে না আসায় আমি দোকানে গিয়ে মেয়েটিকে খোঁজ করি৷ সেখানে না পেয়ে দোকানে থাকা বাঙালিদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলে তারা মেয়েটিকে দেখেনি বলে জানায় এরপর আমি হ্যাপী বাপের বাড়িতে গিয়ে হ্যাপীর কাছ থেকে মেয়েটির খোঁজ নিই৷ সে আমার মেয়েকে শফির দোকান থেকে সিগারেট কিনে নিয়ে যেতে দেখেছে বলে জানায়৷ এরপর আমি বাড়িতে ফিরে আসি৷ তখনও মেয়েটি ফিরে না আসায় আমি ভৌতিক কান্ড মনে করে আর খোঁজ নিইনি আমি কখনো ভাবতে পারিনি আমার মেয়েকে এভাবে মেরে ফেলা হবে

কল্পনা চাকমা আরো বলেন, তুলা পাড়া ও জিয়া নগরের অবস্থান প্রায় পাশাপাশি পাশের জিয়া নগরের আলী আজমের পুত্র মো: কাশেম (হাশেম) প্রায় সময়ই আমার মেয়েকে উত্যক্ত করতো গত ১লা বৈশাখের (১৪ এপ্রিল) দিনও সে দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতর ঢুকে আমার মেয়েকে বেইজ্জত করার চেষ্টা করেছে এ সময় পাড়ার পাহাড়ি-বাঙালি মুরুব্বীরা মিলে সমাধান করে দিয়েছে

তিনি বলেন, জিয়া নগরের কাশেম, জাকির, বাত্যা জাকির, জামাল্যা, শহীদ, ইলিয়াস সহ বেশ কয়েকজন বাঙালি ছেলে প্রায় প্রতিদিনই আমার বাড়ির উঠানে এবং আশেপাশে গাছ তলায় জুয়া খেলতে আসতো এবং মদ পান করতো যেদিন মেয়েটি হারিয়ে যায় সেদিনও হাশেম সহ অন্যান্যরা সন্ধ্যা ৬-৭ টা পর্যন্ত আমার বাড়ির উঠানের গাছতলায় জুয়া খেলা খেলেছে

কল্পনা চাকমা অভিযোগ করে বলেন, কাশেমের নেতৃত্বে বাঙালিরাই আমার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে এছাড়া আর অন্য কেউ হতে পারে নাএতদিন তারা যে এটা করতে চেয়েছিল আমি তা বুঝতে পারিনি

কল্পনা চাকমার বাড়ি ও দোকানের মধ্যবর্তী যে জায়গায় সুনিকা চাকমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে সেখানে আলামত হিসেবে মদের বোতল, সিগারেট, চকলেট, ভাঙা টর্চ লাইটের টুকরো ও মেয়েটির কাপড়-চোপড় রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছেপালাক্রমে ধর্ষণের পর ধর্ষণকারীরা মেয়েটিকে হত্যা করে একটু দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা ঝোপের মধ্যে লাশটি বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়

গতকাল ১৩ মে, শুক্রবার মেয়েটির মা কল্পনা চাকমা বাদী হয়ে মো: কাশেমকে প্রধান আসামী করে নারী, শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধনী/২০০৩ এর ৯(৩)/৩৪ ধারায় দিঘীনালা থানায় মামলা দায়ের করেছেন তিনি ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান

অপরদিকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি মাদ্রী চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক মিশুক চাকমা এক যুক্ত বিবৃতিতে উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ধর্ষণের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.