দীঘিনালায় শহীদ ভরদ্বাজ মুনির ৩১তম শহীদান দিবসে স্মরণসভা ও পথনাটক
দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরদ্বাজ মুনির ৩১তম শহীদান দিবসে স্মরণসভা ও মুঘল সৈন্যদের কামান দখলে নেয়ার ওপর পথনাটক মঞ্চস্থ হয়েছে।
আজ ১৩ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার সকাল ১০টায় দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া কমিউনিটি সেন্টার মাঠে ইউপিডিএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
“শহীদ ভরদ্বাজ মুনির রক্তে সিক্ত মাইনি উপত্যকায় বরদাস্ত করি না রক্তচক্ষু, লড়াইয়ের চেতনায় রয়েছি আমরা আজও জাগ্রত” শ্লোগানে আয়োজিত স্মরণসভা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফএর দীঘিনালা উপজেলা সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামে দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি জ্ঞান প্রসাদ চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের দীঘিনালা উপজেলা সহ-সভাপতি ত্রিসোনা চাকমা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দীঘিনালা উপজেলা পিসিপি নেতা মিওন চাকমা ও সঞ্চালনা করেন ইউপিডিএফ সংগঠক সজীব চাকমা।
অনুষ্ঠান শুরুতে শহীদ ভরদ্বাজ মুনির স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শহীদ পরিবারের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মল্লিকা চাকমা ও সবিতা চকমা; ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মিল্টন চাকমা ও অতুল চাকমা, গণসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পুষ্টস্তবক অর্পণ করেন জ্ঞান প্রসাদ চাকমা, শিউলি চকমা ও মিওন চাকমা এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অমর জীৎ চাকমা ও জোসি চাকমা।
এর পরে শহীদ ভরদ্বা মুনিসহ অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
নিরবতা পালন শেষে জ্ঞান প্রসাদ চাকমা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেয়ার পর মুঘল সৈন্যদের কামান দখলে নেয়ার ওপর একটি পথ নাটক মঞ্চস্থ করা হয়।
এরপর ইউপিডিএফ সংগঠক মিল্টন চাকমা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, শহীদ ভরদ্বাজ মুনি দীঘিনালাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন গর্বিত সন্তান। ১৯৯২ সালের আজকের এই দিনে ৭০ বছর বয়সেও তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের গণসমাবেশে যোগ দিতে রাজপথে নেমে ইতিহাস সৃষ্টি করে কতটুকু জাতপ্রেম, দেশপ্রেম থাকলে একজন মানুষ এই বয়সে মিছিলে অংশ নিয়ে আত্মবলিদান দিতে পারে তা আমাদেরকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে হবে। সেদিন সেনা মদদে সেটলার দুর্বৃত্তরা কিভাবে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের উপর হামলা চালিয়েছিল তা যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তাদের নিশ্চয় সেই ঘটনাটি ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
তিনি আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠি সেই সময় যেভাবে আন্দোলন ধ্বংসের চক্রান্ত চালিয়েছিল আজো সেই চক্রান্ত বিদ্যমান রয়েছে। তার প্রমাণ হচ্ছে আজকের এই স্মরণসভাটি কয়েক হাজার মানুষের জমায়েত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল দালাল কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দীঘিনালায় এক সমাবেশে এসে সেনা মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের আজকের স্মরণসভা অনুষ্ঠান ভণ্ডুল করে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যায়। যার প্রেক্ষিতে মুখোশরা বোয়ালখালি ইউনিয়নের তেভাঙছড়া, সাদকছড়া, বটতুলি, পুকুর ঘাট এলাকার জনগণকে হুমকি দিয়ে আজকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিষেধ করে।
মিল্টন চাকমা বলেন, শাসকগোষ্ঠি একদিকে দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ নানা উৎপীড়ন চালাচ্ছে, অন্যদিকে ঠ্যাঙারে মুখোশ সন্ত্রাসী লেলিযে দিয়ে খুন, গুম, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জারি রেখেছে। সেটলার বাঙালিদের দিয়ে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করছে। সম্প্রতি রাঙামাটির লংগদুতে সেটলারদের দিয়ে ভূমি বেদখলের মাধ্যমে বিবেক সাধনা বনবিহার দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
তিনি শহীদ ভরদ্বাজ মুনির আত্মবিলদান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে শাসকগোষ্ঠির অন্যায়-অবিচার, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিযে আসার জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন