দীঘিনালায় উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপন সহ্য করা হবে না: আলোচনা সভায় বক্তারা
দীঘিনালা ॥ দীঘিনালায় বিজিবি ৫১ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপন সহ্য করা হবে না বলে গতকাল আলোচনা সভায় বক্তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বাবুছড়ায় ২১ পরিবারের সাথে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবের্গর মত বিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দীঘিনালা মৌজার হেডম্যান প্রান্তর চাকমা, দীঘিনালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুসময় চাকমা, ৪ নং দীঘিনালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা, ৫ নং বাবুছড়া ইউপির চেয়ারম্যান সুগতপ্রিয় চাকমা, নতুন চন্দ্র কার্বারী, সন্তোষ কুমার কার্বারী, গোপা চাকমা, মৃণাল কান্তি চাকমাসহ আরো অনেকে।
বক্তারা বলেন, ‘উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবার গত দুই বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের প্রতি সরকার ও প্রশাসনের অবহেলার শেষ নেই। এলাকাবাসীর ত্রাণ সহায়তায় তারা কোন রকমে দিন গুজরান করছে। খাগড়াছড়ির নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও দীঘিালার ইউএনও তাদেরকে বার বার পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুনর্বাসনের বিষয়ে দীঘিনালা উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা গত বছর ৩১ অক্টোবর কুজেন বাবুর সাথে তার বাসভবনে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে তিনি ‘বনভান্তের’ নামে শপথ নিয়ে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি তার সেই অঙ্গীকার থেকে সরে এসেছেন।’
তারা কুজেন বাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২রা মার্চ ২০১৬ তারিখে উপজেলা চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা ও সাবেক বাবুছড়া চেয়ারম্যান পরিতোষ চাকমা এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সাথে দেখা করেন। এ সময় তিনি জমি কিনে ২১ পরিবারকে পুনর্বাসন করতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। অথচ ইতিপূর্বে তার সাথে আলোচনার সময় জমি কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার নির্দেশে দীঘিনালার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় হেডম্যানকে নিয়ে ৭ সদস্যের একটি ‘জমি নির্বাচন কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কমিটির কাজও বহুদূর এগিয়ে যায়। পুনর্বাসনের জমি নির্বাচিন করা হয় এবং জমি কেনার সিদ্ধান্তের সাথেও কুজেন বাবু একমত হন। কিন্তু শেষ বেলায় এসে তিনি বেঁকে বসেন ও তার অঙ্গীকার থেকে সরে যান।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারও ২১ পরিবারকে বার বার পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গত ৮ মার্চ তিনি দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমাকে জানান যে, ২১ পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দীঘিনালা জোন কমান্ডার মো: মোহসিন রেজা আগামী ১৬-১৭ মার্চ পুনর্বাসনের জমি দেখতে যাবেন। তিনি ২১ পরিবার ও এলাকাবাসীকে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দেন।’
ইতিপূর্বে ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২১ পরিবারের মধ্যে থেকে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইউএনও-র সাথে সাক্ষাত করলে তিনি তাদেরকে জনপ্রতিনিধিদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারী ২১ পরিবারের প্রতিনিধি ও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ইউএনও-র সাথে আবার সাক্ষাত করেন। এ সময় তিনি তাদেরকে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করার আশ্বাস দেন।
উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের প্রতিনিধি নতুন চন্দ্র কার্বারী সভায় বলেন, ‘আমরা আর কতদিন অপেক্ষা করবো। আমাদেরকে কেবল আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আমাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য কোন কাজ করা হচ্ছে না। আমরা আর মিথ্যা আশ্বাস শুনতে রাজি নই।’
তিনি দীঘিনালা জোন কমান্ডার মহসিন রেজার জমি পরিদর্শনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আমরা ইউএনও-র কথা আর একবার বিশ্বাস করতে চাই। ১৭ তারিখের মধ্যে পুনর্বাসনের বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না। আমরা এভাবে অন্যের ত্রাণ সাহায্যের উপর নির্ভর করে কতদিন থাকবো?।’
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বীরা আগের মতো ২১ পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগীতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।