দীঘিনালায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর : শক্তি প্রয়োগ নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন- প্রথম আলো সম্পাদকীয়

159
10

সিএইচটিনিউজ.কম

[লেখাটি  আজ ১৭ জুন প্রথম আলো পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে ছাপানো হয়।  প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সিএইচটিনিউজ.কম’র পাঠকদের জন্য লেখাটি হুবহু এখানে প্রকাশ করা হলো-সম্পাদক]

দীঘিনালায় পাহাড়িদের জায়গার উপর অবস্থানরত ৫১নং ব্যাটালিয়নের বিজিবি সদস্যরা
দীঘিনালায় পাহাড়িদের জায়গার উপর অবস্থানরত ৫১নং ব্যাটালিয়নের বিজিবি সদস্যরা

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এলাকায় বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য বেশ কিছু আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে৷ স্থানীয় ২১টি আদিবাসী পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে গ্রামের পাশের উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে৷ আদিবাসীদের বাধার কারণে বিজিবি-আদিবাসী সংঘর্ষের অভিযোগ তুলে বিজিবির পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে৷ নারীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ সরকার যখন পার্বত্য চুক্তির সব ধারা বাস্তবায়নের কথা বলছে, আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের দাবি করছে, তখন দীঘিনালায় আদিবাসী পরিবারগুলো নিজেদের বাসায় থাকতে পারেছে না কেন, সে প্রশ্ন সংগতভাবেই ওঠে৷

পার্বত্য অঞ্চলে সংঘাতময় পরিবেশের অবসানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে চুক্তি সম্পাদনের পর ভারত থেকে শরণার্থী প্রত্যাবাসনের ২০ দফা চুক্তি ২০০৮ সালে পুরোপুরি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা হয়েছে বলে দাবি করা হয়৷ কিন্তু ২০০৫ সালে দীঘিনালার এই এলাকার প্রায় ৪৫ একর জমি সরকার হুকুমদখলের নোটিশ দিলে সেখানে বসবাসরত আদিবাসীরা প্রতিবাদ জানান৷ এ বিষয়ে তাঁরা আদালতে রিটও করেন৷ পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়-টিলায় আদিবাসীদের আবাসস্থলের লিখিত দলিল থাকে না, চাষাবাদের জমির দলিল থাকে৷ এ অবস্থায় প্রশাসনের হুকুমদখলের উদ্যোগ আদিবাসীদের স্বার্থের পরিপন্থী৷

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, বিজিবি যে এলাকাজুড়ে তাদের ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে, তার ভেতরে আদিবাসীদের বাড়িঘরও রয়েছে৷ বিজিবির দাবি, তারা আদিবাসীদের উচ্ছেদ করছে না৷ কিন্তু উচ্ছেদই যদি করা না হবে তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে কেন? চারপাশে যদি বিজিবি দপ্তর থাকে, তাহলে ঘেরাওয়ের মধ্যে আদিবাসীরা থাকবে কীভাবে, আর তারা চাষাবাদই বা করবে কোথায়?

পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে স্থানীয় আদিবাসীদের মতামত নিতে হবে৷ ক্ষমতাসীনেরা যখন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য বিএনপিকে অভিযুক্ত করে আসছে, তখন তাদের আমলে গৃহীত বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর নির্মাণের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে কেন?

বিজিবির জন্য ভূমি অধিগ্রহণের নামে কোনো আদিবাসী পরিবারকে উচ্ছেদ করা যাবে না৷ ভূমি অধিগ্রহণ করাকে কেদ্র করে দীঘিনালায় গ্রেপ্তার নারী-পুরুষদের মুক্তি এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে৷ শক্তি প্রয়োগ নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যাটির নিষ্পত্তি করতে হবে৷

সৌজন্যে: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.