দীঘিনালায় শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বাধা দেয়ার প্রতিবাদে সোমবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ
সিএইচটিনিউজ.কম
দীঘিনালা: বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থানান্তর ও উচ্ছেদকৃত ২১ পরিবারকে তাদের নিজ জমিতে পুনর্বাসনের দাবিতে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বাধা প্রদান, শারীরিক নির্যাতন ও গুলি চালানোর প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার (১৬ মার্চ) দীঘিনালায় সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটি।
রবিবার (১৫ মার্চ) দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক পরিতোষ চাকমা এক বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বাধা প্রদান, শারীরিক নির্যাতন ও গুলি চালানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, সকাল ১০টায় দীঘিনালা উপজেলা মাঠ থেকে পদযাত্রা শুরু হলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাইনী ব্রিজে বাধা দেয়। পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদেরকে বাবুছড়ার কাছে নির্মিতব্য বিজিবি ৫১ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের দিকে যেতে দেয়া না হলে তারা সেখানে সমাবেশ করেন।
এছাড়া নু-অ পাড়া, বানছড়া, রাঙাপানিছড়া (কার্বারী টিলা) আদর্শ স্কুল ও বাবুছড়ায়ও পদযাত্রায় যোগদানকারীদের আটকানো হয়। পদযাত্রার একটি অংশ রাঙাপানি ছড়ায় পৌঁছলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি বর্ষণ করে। অবশ্য এতে কেউ হতাহত হয়নি।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী দুই ব্যক্তির উপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। এদের মধ্যে একজন হলেন শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সুবিকাশ চাকমা। তাকে মাইনী ব্রিজে বুটের লাথি মেরে আহত করা হয়। আহত অন্যজনের নাম ত্রিদিব চাকমা, তাকে নারিকুল বাগানে মারধর করা হয়। এতে তার নাক ফেটে যায়। এই দু’জন ছাড়াও সেনা-পুলিশের হামলায় আরো কমপক্ষে ৬ জন আহত হয়েছে।
পদযাত্রায় যোগদানে বাধা দেয়ার জন্য প্রশাসন ও সেনাবাহিনী আজ সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে সাজেক, মেরুংসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার লোকজন এতে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু এরপরও আনুমানিক ১৪ হাজার নারী পুরুষ এই পদযাত্রায় সামিল হয়েছেন।
পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদেরকে যে সব স্থানে বাধা দেয়া হয় সেখানে তাৎক্ষণিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আদর্শ স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান পরিতোষ চাকমা।
তিনি শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বাধা প্রদানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর সমালোচনা করেন এবং অংশগ্রহণকারীদের উপর বর্বর শারীরিক নির্যাতন ও গুলি চালানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি এভাবে দমনপীড়ন চালিয়ে দীঘিনালাবাসীর ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না মন্তব্য করেন এবং আগামীকাল অর্থাৎ ১৬ মার্চ সোমবার দীঘিনালায় সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের জন্য ইমারত নির্মাণের কোন সামগ্রী নিয়ে যেতে দেয়া হবে না।
পরিতোষ চাকমা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক অবিলম্বে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের নির্মাণ কাজ বন্ধ, উক্ত সদর দপ্তর অন্যত্র স্থানান্তর, বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারকে তাদের নিজ জমিতে পুনর্বাসন এবং গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে দেয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। উক্ত দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
নু-অ পাড়ায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ধর্মজ্যোতি চাকমা, দীঘিনালা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান গোপাদেবী চাকমা ও বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুগতপ্রিয় চাকমা।
তারা বলেন শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বাধা দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী আচরণ দেখিয়েছে। তারা জোর করে নিরীহ মানুষের জমি কেড়ে নিয়ে বিজিবির সদর দপ্তর স্থাপন না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
রাঙাপানি ছড়ার সমাবেশে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের দীঘিনালা শাখার সভানেত্রী মিনা চাকমা ও ইউপিডিএফের সংগঠক মিঠুন চাকমা। তারা বলেন বিজিবি ২১ পরিবারকে উচ্ছেদ করে ও তাদের জমিজমা কেড়ে নিয়ে যে অন্যায় করেছে তা মেনে নেয়া যায় না।
মাইনী ব্রিজে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর সেখানে অনুষ্ঠিত তাৎক্ষণিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দীঘিনালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুসময় চাকমা, কবাখালি ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্ব কল্যাণ চাকমা এবং ৪ নং দীঘিনালা ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৪ মে গভীর রাতে বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ৪ নং দীঘিনালা ইউনিয়নের যতœ কুমার কার্বারী পাড়া ও শশী মোহন কার্বারী পাড়ায় অবস্থান নেয় এবং ১০ জুন সেখান থেকে ২১ পরিবারকে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেয়। সে সময় বিজিবি ও পুলিশের হামলায় ১৮ জন গ্রামবাসী আহত হন, যাদের অধিকাংশ বয়স্ক নারী। বিজিবি এরপর ১১১ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মামলা দেয়। এই মামলায় অনেককে গ্রেফতার করা হয়।
বর্তমানে উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবার বাবুছড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কমকর্তার কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ধর্ম জ্যোতি চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
———————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।