আবু দাউদ, খাগড়াছড়ি
সিঁড়ি। ওঠানামার সিঁড়ি। তবে অন্য সিঁড়ির মতো সাদাসিধে নয়। তুলা গাছকে ধাপে ধাপে কেটে অদ্ভুত এ সিঁড়ির কারিগর পাহাড়ের ত্রিপুরা আদিবাসীরা। এই ভয়ংকর সিঁড়িপথে দশ পাড়া-মহল্লার হাজার মানুষের নিত্য চলাচল। পাহাড় চূড়ার এসব মানুষের নেই সমতলের সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প পথ। তাই বছরের পর বছর চলছে এভাবেই। দুর্গম এই সিঁড়ি পাড়ি দিতে দারুণ অভ্যস্ত এখানকার আদিবাসীরা। অবাক করা এই

সিঁড়িটি পার্বত্য খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়া ইউনিয়নের।
পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সনজিব ত্রিপুরা জানান, পেরাছড়া ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিরমাথা (হাতিমুড়া), ভাঙ্গামুড়া, বাদলছড়া, মাথনতৈসা, হাজাপাড়া, সাধুপাড়া, কেশব মহাজনপাড়া, বাঙ্গালকাঠি, নতুনপাড়া ও কিনাপাপাড়ার মানুষরাই মূলত এই সিঁড়ি ব্যবহার করে। যুগ যুগ ধরে একইভাবে যাতায়াতের কারণে কঠিন ও দুঃসাধ্য বিষয়টিও রপ্ত করে ফেলেছে এলাকাবাসী।
খাগড়াছড়ি-পানছড়ি প্রধান সড়কের গিরিফুল দিয়ে চেঙ্গী নদী পার হয়ে আরো প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম শেষে শঙ্কমহাজনপাড়া। সেখানেই চোখে পড়ে একটি খাড়া পাহাড়। এটিকে কেউ বলে হাতিমাথা, আবার কেউ কেউ বলে হাতিমুড়া। মূলত হাতিমাথা পাহাড়টির ওপরে পাহাড়ি পাড়া। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এসব এলাকার কিছু অংশ মাটিরাঙ্গা আর কিছু অংশ পড়েছে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায়। দুটি মৌজার মধ্যে থাকা ওইসব এলাকার মানুষের ভাগ্য নির্ভর করে ওই এক সিঁড়িতেই।
হাতিমাথায় সুউচ্চ খাড়া পাহাড়ে লাগানো তুলা গাছের তৈরি বিশেষ ধরনের সিঁড়িটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩২ ফুট। একেবারে ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলের এ সিঁড়িটি দেখলেই শরীর শিউরে ওঠে, এই বুঝি কাত হয়ে পড়ল। মূল সিঁড়িটির পর আরো প্রায় ৩৪ ফুট খাড়া পাহাড় উঠতে হয় জীবনের তাগিদে। স্থানীয় পাহাড়িরা ওই খাড়া পাহাড়টিও চলাচল করে একটি বাঁশকে রেলিং হিসেবে ধরে। সাধুপাড়ার শয়ন ত্রিপুরা বলেন, সিঁড়িটা ঈশ্বরের ইচ্ছা। ভালোই আছি। তবে অসুখ-বিসুখ হলে হাসপাতালে নেওয়া যায় না। ডায়রিয়া বা গুরুতর অসুস্থ হলে অনেক সময় মৃত্যুই অনিবার্য। কারণ ঝুঁকিপূর্ণ সিঁড়ি দিয়ে অসুস্থ রোগীকে নিয়ে আসার পথেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সাধুপাড়ার কার্বারী শংকর ত্রিপুরা বলেন, ধান, আদা, হলুদ, শাক-সবজিসহ জুমে উৎপন্ন ফসল, কলা, কাঁঠাল, আনারস ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে সিঁড়ি ওঠানামা খুবই বিপজ্জনক। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা জানান, তিনি হাতিমাথার মানুষের দুর্দশার কথা জেনেছেন। দ্রুতই এলাকার মানুষের সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে। পার্বত্য সচিব এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানকে এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন কাজ হাতে না নিলে জেলা পরিষদ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ