নান্যাচরে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনা সভা

নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল (৫ এপ্রিল ২০২৫) নান্যাচরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“অস্তিত্ব ধ্বংসের কবল থেকে জাতিকে রক্ষার্থে যুবশক্তি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে সমবেত হও, প্রতিরোধ গড়ে তোল” এই স্লোগানে গতকাল বেলা ১:০০টায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন চাকমার সভাপতিত্বে ও নান্যাচর উপজেলা শাখার সদস্য সুমন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের নান্যাচর ইউনিটের সমন্বয়ক সুকীর্তি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ধর্মশিং চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক ঝিমিত চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক রিতা চাকমা ও যুব সমাজের প্রতিনিধি যতন খীসা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি সদর উপজেলা শাখার সভাপতি বিপ্লব চাকমা।
সভার শুরুতে পঞ্চসেন বিপুল-পলাশ-লিটনসহ জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে এযাবৎকালে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভায় ইউপিডিএফ সংগঠক সুকীর্তি চাকমা বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে যতগুলো সংগঠন আছে তার একটি গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম। এ সংগঠনটি ২০১১ সালে সংবিধানে বাঙালি বানানোর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এছাড়া ভূমি রক্ষার আন্দোলনসহ অন্যায় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম সক্রিয়ভাবে আন্দোল করে যাচ্ছে।
শাসকগোষ্ঠী যুব সমাজকে আন্দোলন বিমুখ করতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা যুব সমাজের ধ্বংসের কারণ হিসেবে টেকনোলজির সঠিক ব্যবহার করতে না পারাকেই চিহ্নিত করতে পারি। আমরা এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধীন ছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র ভাগ করে শাসন করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করে আমাদের শাসন করছে। শাসকগোষ্ঠী চায় যুব সমাজ যাতে আন্দোলনে যুক্ত না হয়ে বিপথে পরিচালিত হয় এবং আমরা যাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারি।
সামাজিক অবক্ষয় বিষয়ে সুকীর্তি চাকমা বলেন, বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সামাজিকভাবে এটা প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো এবং এলাকায় ও পাড়া-গ্রামে আমরা পাঠাগার তৈরি করে ছাত্র-তরুণদেরকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে পারি।
তিনি জাতীয় মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠীর সকল নীলনকশা ভেস্তে দেওয়া। আমাদের অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে। কিন্তু জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তি সব বাধাকে অতিক্রম করে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনকে চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত নির্যাতিত অধিকার হারা মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে সামিল হওয়ার জন্য ছাত্র-যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
যুবনেতা ধর্মশিং চাকমা বলেন, ২০০২ সালে আজকের এই দিনে আমাদের এ সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় মুক্তির আন্দোলন যুব সমাজকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। প্রত্যেক আন্দোলনে যুব সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। যুব সমাজ সংগঠিত হলে জাতীয় মুক্তি সম্ভব।
তিনি যুব সমাজকে মদ-জুয়া থেকে বিরত থেকে জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে যুব ফোরামের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।
ছাত্রনেতা ঝিমিত চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা প্রতিনিয়ত দেখি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-দমন-পীড়ন, নারী নির্যাতন। এ নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
রিতা চাকমা বলেন, যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার লক্ষে যুব ফোরাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিন্তু বর্তমানে সমাজের যুবকদেরকে প্রায়ই মদ-জুয়ায় আসক্ত থাকতে দেখা যায়। এমনিতে শাসকগোষ্ঠি চায় যুব সমাজ যাতে মদ-জুয়াসহ নানাভাবে মশগুল থেকে আন্দোলন থেকে দূরে থাকে। তাই যুব সমাজকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার জন্য কাজ করতে হবে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন ইউন সরকার এসব বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ফলে অতীতের চেয়েও ভয়াবহভাবে নারীর ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটঢেছ।
জেএসএস’র সমালোচনা করে তিনি বলেন, জেএসএস (সন্তু) এখন পুরোপুরি শাসকগোষ্ঠীর নীলনক্সা বাস্তবায়নে কাজ করছে। ফলে তারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা বললেই তাদেরকে শত্রু মনে করে থাকে।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে কাউখালিতে মুখোশরা সেনাবাহিনীসহ লুটপাট করতে গিয়ে সাধারণ জনগণ যেভাবে তাদের প্রতিরোধ করেছে তা পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনে আরো নতুন শক্তি যুক্ত করেছে। তিনি সবাইকে নারী নির্যাতনসহ সকল অন্যায দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
যুব প্রতিনিধি যতন খীসা বলেন, যুব সমাজ, যুব শক্তি যদি একত্রিত থাকে তাহলে যে কোন সমাজ পরিবর্তন সম্ভব। সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সমাজের যুব শক্তিকে সচেষ্ট ভুমিকা পালন করা দরকার। বর্তমানে যুব সমাজকে মদ-জুয়ায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে না থেকে সমাজের সকল পেশা-শ্রেণির মানুষকে সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রিয়তন চাকমা উপস্থিত সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজকে যুব সমাজ দিশাহারা। না পারছে সমাজ পরিবর্তনে ভুমিকা রাখতে, না পারছে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে ভুমিকা রাখতে। মদ জুয়ায় আসক্ত যুব সমাজ কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
তিনি সুস্থ সমাজ গঠন ও অস্তিত্ব ধ্বংসের কবল থেকে জাতিকে রক্ষা করতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পতাকাতলে সমবেত হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।