নান্যাচরে রমেল চাকমার স্মরণসভা করেছে পিসিপি

0

নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩

‍‍‍‍‍ রাঙামাটির নান্যাচরে সেনা হেফাজতে ছাত্র নেতা রমেল চাকমা হত্যার ৬ষ্ঠ বার্ষিকীতে স্মরণসভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নান্যাচর থানা শাখা।

আজ ১৯ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার সকাল ৮টায় অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে রমেল চাকমার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এরপর সকাল ৯টায় এক স্মরণসভা আয়োজন করা হয়। “বিপ্লবীর মৃত্যু নেই, বেঁচে থাকে অনন্তকাল বিপ্লবী চেতনায়” এই শ্লোগানে আয়োজিত স্মরণসভায় পিসিপি’র নান্যাচর থানা শাখার সভাপতি লুইস চাকমার সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক জেকশন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিপন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি প্রিয়তন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন নান্যাচর উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক পূজা চাকমা ও পিসিপি’র নান্যাচর উপজেলা শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিঝুম চাকমা।

সভার শুরুতে রমেল চাকমাসহ অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, এদেশের সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অন্যায়-অবিচার বরাবরই ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছে। ৬ বছরেও রমেল চাকমাকে নির্যাতন ও হত্যার সাথে জড়িত সেনা কর্মকর্তা বাহালুল আলম ও মেজর তানভীর গংদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণে ফলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা এ অঞ্চলের জনগণের উপর যা ইচ্ছে তাই করছে। ফলে পাহাড়ের সাধারণ জনগণ চরম নিপীড়নের মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।

বক্তারা রমেল চাকমাকে অন্যায়ভাবে আটক ও নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, রমেল চাকমা সে সময় নানাচর কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। ৫ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে পরীক্ষা না থাকায় তিনি সাপ্তাহিক হাটবারের দিন নান্যাচর বাজার থেকে প্রয়োজনীয় বাজার কিনে ভাড়া বাসায় উপজেলা পরিষদের সামনে ছোট্ট একটি দোকানে বসে বাব-মা’র কাছ থেকে হাতখরচ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় হঠাৎ নান্যাচর জোন থেকে একদল সেনা সদস্য উপস্থিত হয়ে রমেল চাকমাকে বিনা কারণে আটক করে টেনে হিঁচড়ে নান্যাচর জোনে নিয়ে যায়। সেখানে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন চালানোর পর সন্ধ্যায় নান্যাচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর মুমূর্ষু অবস্থা দেখে ভর্তি না করে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। এরপর সেদিন দিবাগত রাতে সেনারা রমেল চাকমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে রমেল চাকমা মারা যান। পরদিন রমেল চাকমার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার পথে বুড়িঘাট থেকে সেনারা মরদেহটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং ২১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে পরিবারের নিকট হস্তান্তর না করে ধর্মীয়-সামাজিক রীতি বহির্ভূতভাবে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে।

বক্তারা আরো বলেন, রমেল চাকমাকে হত্যা করা গেলেও তিনি যে চেতনা ধারণ করে গেছেন সে চেতনাকে কখনো হত্যা করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত হাজারো রমেল আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রস্তুত রয়েছে।

স্মরণসভা থেকে বক্তারা অবিলম্বে রমেল চাকমা হত্যার ঘটনায় জড়িত তৎকালীন নান্যাচর জোন কমাণ্ডার বাহালুল আলম ও রাঙামাটি রিজিয়নের জি-টু মেজর তানভীর গংদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার দাবি জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More