নান্যাচর গণহত্যার বিচার হলো না ২২ বছরেও
।। পারদর্শী।।
১৯৯৩ সালের ১৭ নভেম্বর সংঘটিত হয় ভয়াবহ নান্যাচর গণহত্যা। সেদিন বাজারে আসা লোকজনের উপর নারকীয় তান্ডবে ঝাপিয়ে পড়েছিলো সেনাবাহিনী ও তাদের লেলিয়ে দেয়া সেটলার বাঙালিরা। রক্তাক্ত হয়েছিল নান্যাচরের মাটি। আজ এ হত্যাকাণ্ডের ২২ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু আজো এর কোন বিচার হলো না।
রাঙামাটির নান্যাচরে এ হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করা হয়েছিল একটি যাত্রী ছাউনীকে সেনা চেকপোষ্ট বানানোর প্রতিবাদ করার কারণে। সেনারা যাত্রী ছাউনীটিকে চেকপোষ্ট বানিয়ে এলাকার লোকজনকে নানাভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন ও হয়রানি করে আসছিলো। সেনাদের এই অন্যায় খবরদারির প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলো নান্যাচরের ছাত্র সমাজ। তারা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলো, যাত্রী ছাউনী থেকে সেনা চেকপোষ্ট সরিয়ে নেয়ার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছিলো। কিন্তু সেনাবাহিনী ছাত্রদের দাবি মেনে না নিয়ে ষড়যন্ত্র পাকাতে থাকে। তারা তথাকথিত গণপরিষদ নামধারী সেটলার দুর্বত্তদের সংঘটিত করে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটা যে মহা অন্যায় সেটা সেনারা বুঝিয়ে দিলো হত্যাযজ্ঞ চালানোর মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে তারা দেখিয়েছে, প্রতিবাদ করলে পরিণাম হবে এমনই। পাহাড়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা চলবে না।
শুধু নান্যাচর গণহত্যা নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর একটি কায়েমী স্বার্থবাদী অংশ জড়িত থাকে। তারা ইন্ধন যোগায়, সহযোগিতা দেয় সেটলার হায়েনাদের। এমনকি তারা নিজেরাও গুলি চালিয়ে ঝাঝড়া করে দেয় এক একটি পাহাড়ির বুকের পাঁজর। পাহাড়িদের খুন করতে তাদের একটুও হাত কাপে না।
নান্যাচর গণহত্যার পর সরকারের পালাবদল হয়েছে। নানা কিসিমের সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে। কিন্তু কোন সরকারই পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যার বিচার করেনি, দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়নি।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ‘৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করলেও, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যা সম্পর্কে টু শব্দটিও করে না।
কাজেই, নান্যাচর গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার ও হামলার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে তরুণ প্রজন্মকেই সোচ্চার হতে হবে।#
১৭.১১.২০১৫
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]