খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥ খাগড়াছড়ির নুনছড়ি দেবতা পুকুর এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নির্মিত একটি লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন সেনবাহিনীর মহালছড়ি জোন কমাণ্ডার মোঃ মোস্তাক আহম্মদ।
আজ শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় নুনছড়ি এলাকার ৮টি গ্রামের (থলিপাড়া, পুকুরপাড়া, হেডম্যান পাড়া, গুইমারা পাড়া, ছাতি পাড়া, স্কুল পাড়া, মধ্যম পাড়া, মালতি পাড়া) কার্বারী, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মুরুব্বীসহ ৪০ জনের মতো গ্রামবাসী মহালছড়ি জোনে গেলে জোন কমাণ্ডার এই নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ আক্টোবর মাইসছড়ি বজার থেকে ফেরার পথে বিজিতলা ক্যাম্পের সুবেদার আমিনুল ইসলাম নুনছড়ি থলিপাড়া গ্রামের লোকদের ডেকে বলেন যে, পুকুর পাড়া এলাকায় যে সনাতন মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এ সময় লোকজন তার কথার উত্তরে ‘আমরা মন্দির ভাঙতে পারবো না’ বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর তিনি পরদিন (২৫ অক্টোবর) মহালছড়ি জোনে গিয়ে জোন কমাণ্ডারের সাথে দেখা করতে বলেন। লক্ষী পুজার কারণে তারা ঐদিন যেতে পারবেন না বলে জানান এবং পূজা শেষে দেখা করবেন বলে তারা সুবেদার আমিনুল ইসলমাকে জানিয়ে দেন।
সেই অনুসাারে আজ সকালে উক্ত ৮টি গ্রামের লোকজন জীপগাড়ি যোগে মহালছড়ি জোন কমাণ্ডারের সাথে দেখা করতে যান। সেখানে যাওয়ার পর মাইসছড়ি মৌজার হেডম্যান কলিন জ্যোতি চাকমা, পুকুর পাড়ার কার্বারী কুঞ্জ মেহান ত্রিপুরা, গুইমারা পাড়ার কার্বারী কলিধন ত্রিপুরা, মধ্যম পাড়া কার্বারী খুকুমনি ত্রিপুরা, হেডম্যান পাড়া কার্বারী তেজেন্দ্র রোয়াজা, মহিলা কার্বারী দৃহ ত্রিপুরা, গুইমারা ইউনিয়নের ৯ নং ওর্য়াড মেম্বার কইসক ত্রিপুরা ও মন্দির পরিচালনা কমিটির সম্পাদক বিনাচান ত্রিপুরাসহ ৮ জন প্রতিনিধিকে ভিতরে ঢুকতে দিলেও বাকীদের বাইরে অবস্থান করতে হয়।
এলাকাবাসীর পক্ষে জোন কমাণ্ডারের কাছে মন্দির বিষয়ে তুলে ধরেন তেজেন্দ্র রোয়াজা ও মন্দির পরিচনা কমিটির সম্পাদক বিনাচান ত্রিপুরা। তারা বলেন “আমরা যুগ যুগ ধরে দেবতা পুকুর এলাকায় বসবাস করে আসছি। এই এলাকায় অন্যান্য মন্দির থাকলেও লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির নাই। তাই ৮ গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মিলে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির নির্মাণ করেছি।
জোন কমান্ডার মোস্তাক আহম্মদ এলাকার প্রতিনিধিদেরকে বলেন, “যেখানে মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে সে জায়গাটি সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্পের জায়গা। কাজেই মন্দিরটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে”। তার এই কথার প্রেক্ষিতে এলাকার প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা মন্দির ভাঙতে পারি না। ভাঙলে আমরা সকলে ধ্বংস হয়ে যাবো।
এরপর জোন কমাণ্ডার কাউকে আর কেনা কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আগামী ১ মাসের মধ্যে মন্দিরটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন বলে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বীরা জানিয়েছেন।
এদিকে জোন কমাণ্ডারের মন্দির ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশের খবর পেয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এটা তারা কিছুতেই মানবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ, গত ২২ অক্টোবর মধ্যরাতে গুইমারার কুকিছড়ায় সেনাবাহিনী একটি বৌদ্ধ মন্দির ও বুদ্ধ মূর্তি ভেঙ্গে দেয়। এ নিয়ে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে প্রশাসন বিহার ও বুদ্ধ মূর্তি যথাস্থানে পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।