পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পে এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপন পার্বত্য চুক্তির বিরোধী: সিএইচটি কমিশন

0
122

ডেস্ক রিপোর্ট, সিএইচটি নিউজ।। পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশন(সিএইচটি কমিশন) বলেছে, সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্পে এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত পার্বত্য চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্।

গতকাল ২৮ মে ২০২২ কমিশনের কো-চেয়ার সুলতানা কামাল, এলসা স্ট্যামাটোপৌলৌ ও মিরনা ক্যানিংহ্যাম কেইন যৌথভাবে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

তারা সেনা ক্যাম্প সরিয়ে সেখানে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) বসাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি নতুন এপিবিএন ইউনিট চালুর সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এই সিদ্ধান্তকে ‘পার্বত্য চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করে বলেন, “চুক্তিতে বলা হয়েছে অস্থায়ী সামরিক ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে, কিন্তু এতে এপিবিএন দ্বারা ক্যাম্পগুলো প্রতিস্থাপনের কোন উল্লেখ নেই।”

বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বরাতে জানা যায়, গত ২৬ মে মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার জন্য এপিবিএনের চারটি ইউনিটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ইতিপূর্বে গৃহীত সেনা পরিত্যক্ত ক্যাম্পে এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্তের পর এই ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। এপিবিএন হেডকোয়ার্টারের অতিরিক্ত আইজিপির পক্ষে মোছাঃ সাদিরা খাতুন স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক এক সরকারি সার্কুলারে (স্মারক নং- APB:H: Q/Intelligence – 2022/2306, তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২২) জানা যায়, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যাহারকৃত ২৪০টি সেনা ক্যাম্পে এপিবিএন মোতায়েন করবে। প্রথম পর্যায়ে ৩০টি পরিত্যক্ত ক্যাম্পে এপিবিএন মোতায়েন করা হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের নেতৃবৃন্দ সরকারের এই সিদ্ধান্তে হতবাক বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাদবাকি অস্থায়ী ক্যাম্প সরিয়ে না নিয়ে পরিত্যক্ত ক্যাম্পগুলোতে এপিবিএন মোতায়েন পার্বত্য চুক্তির মৌলিক চেতনার সরাসরি লঙ্ঘন।

কমিশনের নেতৃবৃন্দ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল বেনজির আহমেদ ও সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদিনের হুমকিমূলক বক্তব্যের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তারা বলেন, “কমিশন তাদের মতো উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার মুখ থেকে এ ধরনের বক্তব্যকে অগণতান্ত্রিক, অপেশাদারসুলভ ও হুমকিমুলক বলে মনে করে। এ বক্তব্য জুম্ম জনগণের প্রতি বৈরীমূলক, বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক। এর মাধ্যমে যা ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা হলো সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা না করে বরং পেশিশক্তি ও সহিংসতার মাধ্যমে মোকাবিলা করতে চায়।”

নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও জুম্ম জনগণের অধিকারের দাবিতে আন্দোলনে নিয়োজিত সংগঠন ও ব্যক্তিদেরকে “সন্ত্রাসী” হিসেবে তকমা দেওয়ার ব্যাপারেও কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করে।

কমিশনের মতে, এই সন্ত্রাসী তকমা এমন সময় দেওয়া হচ্ছে যখন অভিযোগ রয়েছে যে নিরাপত্তা বাহিনী কিছু নির্দিষ্ট ঠ্যাঙারে বাহিনীকে মদদ দিয়ে চলেছে, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের কর্মীদের আইন বহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, হয়রানি ও হুমকি দিয়ে থাকে।

‘এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, যে ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’

কমিশন সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা হলো রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা নয়।

কমিশন ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামে বলবৎ সামরিক শাসন ও চুক্তি মোতাবেক সকল অস্থায়ী ক্যাম্প তুলে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পগুলো এপিবিএন ক্যাম্পে রূপান্তরিত না করে, জেলা পরিষদের নিকট “স্থানীয় পুলিশ” বিভাগটি হস্তান্তর করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ১৯৮৯ অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পুলিশ বাহিনী গঠন করতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

এ ছাড়া কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামে এপিবিএন মোতায়েনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনা করা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্ত করা, আদিবাসী অধিকার কর্মীদের সুরক্ষা প্রদান করা এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের রেডম্যাপ ও সময়সূচী ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.