পর্যটনের হুমকিতে বিশ্বের আকর্ষণীয় স্থানসমূহ
।। উসান মারমা।।
(বিবিসির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে রচিত http://www.bbc.com/news/science-environment-36313139)
ট্যুরিজম বা পর্যটন হলো double-edged sword. অর্থাৎ এর ভালো এবং মন্দ উভয় দিক রয়েছে। পর্যটন একদিকে পৃথিবীর দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়। অন্যদিকে তা অনিয়ন্ত্রিতভাবে পর্যটকের আগমণ ঘটিয়ে এলাকার সৌন্দর্য্যকেই নষ্ট করতে পারে, যে সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য তারা সেখানে ভ্রমণ করে থাকে।
থাইল্যান্ড সরকার ব্যাপক পর্যটনের ফলে ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে কোহ্ তাচাই দ্বীপ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হওয়ার পর বিবিসি বিশ্বের অন্যান্য কতিপয় জনপ্রিয় আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলোর অনুরূপ হুমকি তুলে ধরেছে। (১৭ মে ২০১৬) নিচে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড
পর্যটন বৃদ্ধির ফলে ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ এখন প্রবাল বিলুপ্তি ও অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যার মুখোমুখি। এক সময় হলিউড ফিল্ম ‘দ্যা বিচ’ এর পটভূমি হিসেবে এই দ্বীপপুঞ্জকে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই পর থেকে সেখানে অনিয়ন্ত্রিত হারে পর্যটকের আগমণ ঘটে। এর ফলে এই গ্রীষ্মম-লীয় স্বর্গভূমিতে পরিবেশের উপর বিরূপ পড়ে। থাইল্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য মতে, কোহ্ ফি ফি এবং তার আশেপাশের দ্বীপগুলো বছরে ১০ লক্ষ ৪০ হাজারেরও বেশী পর্যটককে গ্রহণ করে থাকে।
নৌকায় ব্যবহৃত নোঙর ও ডুবুরীদের কারণে প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হয়েছে এবং মোটর বোটের ব্যাপক চলাচল ও সমুদ্রে আবর্জনা ফেলার কারণে যে দূষণের সৃষ্টি হয় তাতে সামুদ্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে গেছে।
কোজুমেল দ্বীপ, মেক্সিকো
মেক্সিকো উপকূলের অদূরে কোজুমেল দ্বীপ আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত ও উঞ্চম-লীয় প্রবালের জন্য বিখ্যাত। প্রমোদ-ভ্রমণতরীর জন্য জাহাজঘাটা নির্মাণের আগ পর্যন্ত দ্বীপটি ছিল শান্ত। কিন্তু বর্তমানে এটি বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তম জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল যেখানে প্রমোদ-ভ্রমণতরীগুলো ভিড়ে।
এর ফলে এলাকাটি দূষণের শিকার হয়েছে, যা সমুদ্রের শৈলশ্রেণীকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। তাছাড়া তরীগুলো পানিতে উঞ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং প্রবালগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বালি, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ এখন ক্রমবর্ধমান deforestation এর হুমকিতে রয়েছে, কারণ তাকে পর্যটন শিল্প ও বর্ধিঞ্চু জনসংখ্যার জন্য জায়গা করে দিতে হচ্ছে। পর্যটন সেখানে গুণতক হারে বাড়ছে, অপরদিকে অবকাঠামো সেভাবে গড়ে উঠছে না। ফলে সেখানে আবর্জনার পাহাড় জমা হচ্ছে। অস্থানীয় জীবজন্তু ও গাছগাছড়াও দ্বীপটির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গালাপাগোস দ্বীপ, ইকুয়েডর
প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক গালাপাগোস দ্বীপে ভ্রমণে যায় সেখানকার অনন্যসাধারণ জীববৈচিত্র্য ও অকৃত্রিম নৈসর্গিক পরিবেশ উপভোগের জন্য। কিন্তু দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থা বাইরের চাপের ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল অর্থাৎ সহ্য করতে পারে না। এই চাপ কেবল অসংখ্য পর্যটক এবং উন্নয়ন থেকে আসছে না, তাদের সাথে নিয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও প্রাণী থেকেও আসছে। ফলতঃ গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জকে ইউনিসেফের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রাখা হয়েছে।
এভারেস্ট পর্বত
১৯৫৩ সালে এডমন্ড হিলারী ও তেনজিং নরগে এভারেস্ট চূড়ায় ওঠার পর থেকে লক্ষ লক্ষ পর্বতারোহী সেখানে বেস ক্যাম্পে ওঠেন এবং প্রায় ৭,০০০ আরোহী চূড়ার শীর্ষে পৌঁছতে সক্ষম হন। ২০১৪ সালে সেখানে মারাত্মক তুষারধ্বস হয়। তারপরের বছরও নেপালে ভূমিকম্পের ফলে অন্য একটি তুষারধ্বস সংঘটিত হয়। এরপর পর্বতারোহীদের ঢল নামা দুই বছর ধরে বন্ধ থাকে। তবে এবার বসন্তে নতুন করে আবার পর্বত অভিযাত্রা শুরু হয়েছে।
এত বেশী সংখ্যক লোকজনের সেখানে যাওয়ার কারণে এভারেস্টের দুর্বল পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। আরোহীরা তাদের সাথে অনেক জিনিসপত্র নিয়ে যায়, যেমন পর্বতারোহনের সরঞ্জাম, খাদ্যবস্তু, প্লাস্টিক সামগ্রী, টিন, এল্যুমিনিয়ামের কোটা, কাঁচ, কাপড়চোপড়, কাগজপত্র ও তাঁবু। এইসব সরঞ্জামের কিছু অংশ তারা সেখানে ফেলে আসে।
তবে স্যানিটেশন হলো সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতি বছর সেখানে প্রায় ১১,০০০ কিলো মনুষ্য বিষ্ঠা সরানো হয়ে থাকে। এতে কল্পনা করা যায় ওই পর্বতে কী পরিমাণ আবর্জনা জমা হয়। #
——————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।