পানছড়িতে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটির গ্রাম সভা, অচিরেই সংঘাত বন্ধের আহ্বান

0

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩

ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের আগুন ছড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং সংঘাত বন্ধের দাবিতে গ্রামসভা করেছে পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি। ছবি: প্রতিনিধি

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ‘ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি নয়, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চাই’ শ্লোগানে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের আগুন ছড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং সংঘাত বন্ধের দাবিতে গ্রামসভা করেছে পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি। এতে পানছড়ি উপজেলার লতিবান ও উল্টাছড়ি ইউপি এবং খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউপি’র ১নং ওয়ার্ডের আওতাধীন অন্তত ৩০টি গ্রাম থেকে ৫ শতাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন।

আজ শুক্রবার (৩১ মার্চ ২০২৩) সকাল ১১টার সময় অনুষ্ঠিত গ্রাম সভায় সভাপতিত্ব করেন পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জিবন চাকমা। সঞ্জয় চাকমার সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটি সদস্য সাবিনা চাকমা, লতিবান কৃপাচরণ পাড়ার কাব্বারী সাকেন্ডু চাকমা, মেম্বার দয়াময় ত্রিপুরা, নবীন চান পাড়া কার্বারি বিনয় কৃঞ্চ চাকমা, বাম্বৌ পাড়া কার্বারি ব্রজদত্ত ত্রিপুরা, হরিসাধন পাড়া কার্বারি নিরঞ্জন ত্রিপুরা, কুড়াদিয়াছড়া কার্বারি রাপ্রুচাই মারমা প্রমুখ।

সাবিনা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর উস্কানীতে পাহাড়ে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি-হানাহানি চলছে। গত ১৫ মার্চ রাতে সন্তু লারমার সশস্ত্র বাহিনী পানছড়িতে আসার পর এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোন সময় ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে এমন আতঙ্কে জনগণ দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় সামনে বিঝুও শান্তিপূর্ণভাবে করা যাবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাই সংঘাত যাতে না হয় সেজন্য অবিলম্বে নিজ সাংগঠনিক এলাকায় গিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য জেএসএস-এর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সাকেন্ডু চাকমা বলেন, আমরা আজকের এই গ্রামসভা থেকে জেএসএস ও ইউপিডিএফ উভয় দলকে সংঘাত পরিহার করার জন্য অনুরোধ করছি। এ লক্ষ্যে নিজ নিজ সাংগঠনিক এলাকায় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

দয়াময় ত্রিপুরা বলেন, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ আজ অসহায় ও আতঙ্কিত। আজকের এই গ্রামসভা থেকে অনতিবিলম্বে সংঘাত বন্ধ করে এক হয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলন করার জন্য অনুরোধ করছি।

বিনয় কৃঞ্চ চাকমা বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে নির্যাতন-নির্যাতন সহ্য করে এসেছি। তার মধ্যে ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত আমাদেরকে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার কারণে শাসকগোষ্ঠির এখন অনেক সুবিধা হয়েছে। বান্দরবানসহ বিভিন্ন স্থানে জায়গা-জমি বেদখল, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করে আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার যে পাঁয়তারা চলছে তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে না পারলে কোন সুফল পাওয়া যাবে না। তাই সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।

রাপ্রুচাই মামা বলেন, আমরা পানছড়ির মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আগামী  বৈ-সা-বি উৎসব যাতে শান্তিতে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারি তার জন্য সংঘাত পরিহার করতে জেএসএস–ইউপিডিএফ’র প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

নিরঞ্জন ত্রিপুরা বলেন, আমরা আর ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত, হানাহানি চাই না। আমরা সাধারণ জনগণ চাই সম্মিলিতভাবে অধিকার আদায়ের আন্দোলন। সেজন্য আমরা অচিরেই চলমান ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবি জানাই।  

ব্রজদত্ত ত্রিপুরা বলেন, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের কারণে আজ আমাদের আতঙ্কিত অবস্থায় জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এই সংঘাতের কারণে পানছড়ি এলাকাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা অসংখ্যা বাপ-ভাইকে হারিয়েছি। আমরা আর এভাবে ভাইয়ে ভাইযে মারামারি-হানাহানি চাই না।

পানছড়ি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমার ’ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত চাই না’ প্রতি হাত উঁচিয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন সভায় অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: প্রতিনিধি

সভার সভাপতি শান্তি জীবন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে এদেশের শাসকগোষ্ঠি নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রাখাটাও তার অন্যতম একটি অংশ। আমরা দেখতে পেয়েছি সম্প্রতি কুয়া্কাটায় আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমার মধ্যে বৈঠক (চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির ৭ম বৈঠক) অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েকদিন পরই জেএসএস-এর সশস্ত্র গ্রুপের পানছড়িতে আগমন ঘটেছে। এতেই স্পষ্ট হয়েছে যে, ঐ বৈঠকে চুক্তি বাস্তবায়নের চাইতেও সংঘাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শাসকগোষ্ঠির এই খেলা সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। জুম্ম দিয়ে জুম্ম ধ্বংসের এই নীলনক্সার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সকল চক্রান্ত ভেস্তে দিতে হবে।  

তিনি বলেন, পাহাড়ের মানুষ ভালো নেই। জেএসএস-ইউপিএফ যতদিন ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না ততদিন মানুষের মধ্যে স্বস্তি আসবে না। তাই আমরা বার বার সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছি।

তিনি উপস্থিত সকলের মাঝে ‌‘ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি-মারামারি বন্ধ কর, করতে হবে; ইউপিডিএফ-জেএসএস এক হও, লড়াই করো; ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ কর, করতে হবে”—এমন শ্লোগান দেন। এ সময় তিনি ‘আমরা আর ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত চাই না’ বললে সকলে হাত উঁচিয়ে ‘সংঘাত চাই না’ বলে তার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More