পানছড়িতে লোগাং গণহত্যা দিবসে স্মরণ সভা, দালাল বিরোধী চিত্র প্রদর্শনী
পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

“লোগাং গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ কর” শ্লোগানে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে লোগাং গণহত্যার ৩১তম বার্ষিকীতে স্মরণ সভা ও দালাল বিরোধী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, পানছড়ি উপজেলা কমিটি।
আজ ১০ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার সকাল ১১টার সময় চেঙ্গী ইউনিয়ন এলাকায় অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে গণহত্যায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ইউপিডিএফ পক্ষে আইচুক ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোমার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের পক্ষে যথাক্রমে তৃঞ্চাকর চাকমা, এস মঙ্গল চাকমা ও সাবিনা চাকমা, এলাকাবাসীর পক্ষে যথাক্রমে সাধন কুমার কার্বারি, বাদশা কুমার কার্বারি ও রাসাই কার্বারি, জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে খাকারাং সা ত্রিপুরা এবং শহীদ পরিবারের পক্ষে অমিয় কান্তি চাকমা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি এস মঙ্গল চাকমার সভাপতিত্বে ও পিসিপি সাধারণ সম্পাদক সুনীল চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র পানছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক আইচুক ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা, চেঙ্গী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমা, বড়কলক গ্রামের মুরুব্বী জীবন কৃঞ্চ চাকমা ও মরাটিলা জিরানি খোলা এলাকার মুরুব্বী রাচাই মার্মা। এছাড়া সভায় ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন শহীদ পরিবারের পক্ষে অমিয় কান্তি চাকমা ও সাবেক চেঙ্গী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পানছড়ি উপজেলা সভাপতি তৃঞ্চাকর চাকমা।
স্মরণ সভার শুরুর পূর্বে কালো ব্যাচ ধারণ, দালাল বিরোধী চিত্র প্রদর্শন এবং শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল লোগাঙে পাহাড়িদের গুচ্ছগ্রামে সংঘটিত গণহত্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি ববর্রতম ঘটনা। এই দিনটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য একটি কালো দিন। সেদিন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের প্রধান উৎসব বৈ-সা-বি’ র দুই দিন আগে এই গণহত্যা সংঘটিত করা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় বাহিনী সরাসরি এই গণহত্যার ঘটনায় জড়িত ছিল।
বক্তারা আরো বলেন, আমাদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সেটলার বাঙালিরা জায়গা জমি দখল করে করে ভোগ করছে। আমাদের যেখানে বৌদ্ধ মন্দির ছিল সেখানে আজ মর্জিদ নির্মাণ করা হয়েছে। ৯২’র নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ভুলে না যেতে বর্তমান ছাত্র-যুব সমাজজের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
তারা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সুরিকল্পিতভাবে লোগাং গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগামে সংঘটিত ডজনের অধিক গণহত্যার বিচার করছে না। উপরন্তু এসব গণহত্যার ঘটনা আড়াল রেখে অপরাধীদের রক্ষা করতে রাষ্ট্র এখনো নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এসব গণহত্যার ন্যায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না।

বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে চুক্তিপূর্বের চেয়েও ভয়াবহ উল্লেখ করে বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় প্রতিনিয়ত খুন, গুম, অপহরণ, বিচার বহির্ভুত হত্যা, অন্যায় ধরপাকড়, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। দেশের শাসকচক্র ‘ভাগ করো, শাসন করো’ নীতি প্রয়োগ করে জুম্ম দিয়ে জুম্ম ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছ। অতি সম্প্রতি গত ৭ এপ্রিল বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে রাষ্ট্রীয় মদদে বম জাতিসত্তার ৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার আগে খাগড়ালড়ির দীঘিনালা ও মানিকছড়িতে দুই ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যা করা হয়।
তারা বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে নিপীড়িত-নির্যাতিত। এই নিপীড়ন থেকে মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সভা থেকে বক্তারা লোগাং গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন