পানছড়িতে লোগাঙ গণহত্যা দিবসে স্মরণ সভা

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ ।। খাগড়াছড়ির পানছড়িতে লোগাঙ গণহত্যা দিবস পালন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্রগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
লোগাঙ গণহত্যার ৩০ বছর উপলক্ষে আজ ১০ এপ্রিল ২০২২, রবিবার সকাল ১০টায় লোগাঙ ইউনিয়নে তিন সংগঠনের উদ্যোগে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।

স্মরণসভার শুরুর পূর্বে শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর অস্হায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইউপিডিএফ পক্ষে আইচুক ত্রিপুরা ও বিকাশ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পক্ষে এন্টি চাকমা, কুইক চাকমা ও রিপন ত্রিপুরা, পার্বত্য চটগ্রাম নারী সংঘ পক্ষে মিনতি ও আশা চাকমা, শহীদ পরিবার ও এলাকাবাসী পক্ষে কালাচাঁদ চাকমা, রুপবেন্দু চাকমা ও বশিষ্টমনি চাকমা এবং জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে রাত্ত্যমনি চাকমা ও মিন্টু চাকমা।


পরে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি এস মঙ্গল চাকমা’র সভাপতিত্বে ও পিসিপি সাধারন সম্পাদক সুনীল চাকমার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ পানছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক আইচুক ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি সভাপতি নরেশ ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা, পার্বত্য চট্রগ্রাম নারী সংঘের পানছড়ি উপজেলা সভাপতি মিনতি চাকমা ও ২নং চেঙ্গী ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা প্রমুখ।
এতে সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন শহীদ পরিবারের পক্ষে হুরিচুগী চাকমা, ধর্শমা চাকমা ও বশিষ্ট মনি চাকমা, আহত পরিবারের পক্ষে হেম রঞ্জন চাকমা ও রুপসেন চাকমা এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুনয়ন চাকমা, রুপবেন্দু চাকমা, সাধন মনি চাকমা ও রিতা চাকমা।

বক্তারা বলেন, আজ থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল লোগাঙ গুচ্ছগ্রামে সংঘটিত গণহত্যা পার্বত্য চট্রগ্রামে একটি ববর্রতম ঘটনা। এই দিনটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য একটি কালো দিন। সেদিন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের প্রধান উৎসব বৈ-সা-বি’র দুই দিন আগে এই গণহত্যা সংঘটিত করা হয়।
বক্তারা সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিডিআর এর প্রত্যক্ষ মদদে সেটলাররা মিথ্যা গুজব ছড়ায় যে তাদের একজন রাখাল বালককে শান্তিবাহিনী হত্যা করেছে। এই গুজবের কোন প্রকার বাছ-বিচার না করে সেটলার বাঙালরা সংঘবদ্ধ হয়ে ধারালো দা, বল্লম ও লাঠিসোটা নিয়ে পাহাড়িদের গুচ্ছগ্রামে হামলা চালায়। ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় সেটলাররা পালিয়ে যেতে থাকা পাহাড়িদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে এবং বিডিআর সদস্যরা গুলি চালায়। এ ঘটনায় কয়েকশত পাহাড়ি হতাহত হন, অনেকে নিখোঁজ হন। নিহতদের লাশগুলো গুম করে ফেলা হয়। হামলায় পাহাড়িদের ৭ শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়।

বক্তারা আরো বলেন, লোগাঙ গণহত্যার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈ-সা-বি উৎসব বর্জনসহ ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। কিন্তু এদেশের সরকার দীর্ঘ ৩০ বছরেও এ গণহত্যার বিচার করেনি। শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত ডজনের অধিক গণহত্যারও কোন বিচার হয়নি।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থতি তুলে ধরে বলেন, সরকার তথা শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা, অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়েও ক্ষান্ত হয়নি। জুম্ম জনগণকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে শাসকগোষ্ঠি তার ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রেখেছে। তারই অংশ হিসেবে সেনাশাসন ও অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দেশনা জারি রেখে প্রতিনিয়ত আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীসহ জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, খুন, গুম, ভূমি বেদখল করে বাস্তুভিটা থেকে মতো অমানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি গত ১৫ মার্চ সেনা হেফাজতে নির্যাতন চালিয়ে ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে।

বক্তারা ঐক্যবদ্ধভাবে শাসকগোষ্ঠির জুম্ম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা ও অব্যাহত দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
স্মরণসভা থেকে বক্তারা অবিলম্বে লোগাঙ গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ, লোগাঙ গণহত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান।
স্মরণসভা শেষে লোগাঙ গণহত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত প্রতিবাদ ও লোগাঙ অভিমুখে ঐতিহাসিক পদযাত্রার স্থিরচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এছাড়া গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে আজ সন্ধার সময় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হবে বলে আয়োজকরা জানান।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন