পানছড়িতে শহীদ মিঠুন চাকমার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা
পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি ২০২২

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে শহীদ মিঠুন চাকমার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম পানছড়ি উপজেলা শাখা।
আজ মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি ২০২৩) সকাল ৯টার সময় শহীদ মিঠুন চাকমার স্মরণে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। ইউপিডিএফ’র পানছড়ি ইউনিটের পক্ষে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন সংগঠক সম্রাট চাকমা ও বিকাশ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পক্ষে পিংকু চাকমা, রমেশ চাকমা ও তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মিঠুন চাকমাসহ সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরাবতা পালন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়।
এরপর “রাষ্ট্রীয় বাহিনী মদদে সাবেক ছাত্র নেতা মিঠুন চাকমার হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচার কর” এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে এবং “জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আসুন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে এগিয়ে নিই, শহীদ মিঠুন চাকমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি” এই আহ্বানে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম পানছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রিপন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও পিসিপি নেতা সুনীল চাকমার সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ’র পানছড়ি ইউনিটের সংগঠক সম্রাট চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক পিংকু চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা পাঁচ বছরেও মিঠুন চাকমার খুনিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খুনি-সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ালেও প্রশাসন তাদের গ্রেফতার না করে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের এই ভূমিকার কারণে খুনি-অপরাধী চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে জনগণের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের অধিকারকামী শক্তি ইউপিডিএফের নেতৃত্বে চলমান গণআন্দোলনে বাধা সৃষ্টির লক্ষ্যে শাসকগোষ্ঠি সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে মিঠুন চাকমাকে খুন করেছে। এ ঘটনায় শাসকগোষ্ঠি জড়িত থাকার কারণেই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
বক্তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, শহীদ মিঠুন চাকমা’র কোন মৃত্যু নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগ্রামী ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মিঠুন চাকমা যে চেতনা লালন করে গেছেন সে চেতনার কখনো মৃত্যু হবে না। তাঁর লালিত চেতনা ধারণ করেই পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজারো মিঠুনের জন্ম হবে। আর তারাই অধিকার হারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, শাসকগোষ্ঠি শুধু খুন-গুম করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। তারা ভূমি বেদখল, অন্যায় দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। বান্দরবানের লামা, খাগড়াছড়ির মাইসছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ভূমিদস্যু ও সেটলারা পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখল করে তাদের উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত ১ জানুয়ারি মধ্যরাতে লামায় ভূমিদস্যু লামা ইন্ডাস্ট্রিজ’র লেলিয়ে দেয়া দুর্বৃত্তরা রেংয়েন ম্রো পাড়ায় হামলা চালিয়ে ম্রোদের ৩টি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে ও ৬টি ঘর ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। লূটে নিয়েছে ম্রোদের সহায়-সম্পত্তি। বক্তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
স্মরণসভা থেকে বক্তারা অবিলম্বে মিঠুন চাকমার খুনিদের গ্রেফতার করে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সাথে তারা লামায় রেংয়েন ম্রো পাড়ায় হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন