পানছড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ সিজন, শাসন ও জয়েন-এর সম্মানে স্মরণসভা

0
পানছড়িতে ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় নিহত তিন ইউপিডিএফ সদস্য শহীদ সিজন চাকমা, শাসন ত্রিপুরা ও জয়েন চাকমা’র সম্মানে স্মরণসভা করা হয়েছে।

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় নিহত তিন ইউপিডিএফ সদস্য শহীদ সিজন চাকমা, শাসন ত্রিপুরা ও জয়েন চাকমা’র সম্মানে স্মরণসভা করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) পানছড়ি ইউনিট।

আজ শুক্রবার (৮ নভেম্বর ২০২৪) শুক্রবার সকাল ১০টায় “খুন-সন্ত্রাস করে ইউপিডিএফের বিজয় ঠেকানো যাবে না” শ্লোগানে এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

স্মরণসভা শুরুর পুর্বে তিন শহীদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এতে ইউপিডিএফের পক্ষে আইচুক ত্রিপুরা, স্বাধীন চাকমা; তিন সংগঠনের পক্ষে রিপন ত্রিপুরা, দেবাশীষ চাকমা ও মানেকপুদি চাকমা; শহিদ পরিবার বর্গ এবং জনপ্রতিনিধি ও শিশু-কিশোরদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিবতা পালন করা হয়।

শহীদদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন শিশুরা।
তিন শহীদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হচ্ছে।

এরপর অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় ইউপিডিএফের পানছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক আইচুক ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও সদস্য সুর মঙ্গল চাকমার সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পানছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চাকমা, ৩ নং পানছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উচিত মনি চাকমা, ২ নং চেংঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমা, বিশিষ্ট মুরুব্বি বৈশাখ কুমার ত্রিপুরা,  রাইচা মারমা কার্বারি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মানেকপুদি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা সভাপতি রিপন ত্রিপুরা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর পানছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি দেবাশীষ চাকমা।

স্মরণসভায় আইচুক ত্রিপুরা বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে আমুল পরিবর্তন দেখা দিলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় ভিন্ন। শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন পাহাড়ে এখনো থামেনি এবং এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীসহ জনগণের ‘এগত্তরের’ দাবিকে উপেক্ষা করে জেএসএস সন্তু লারমা গ্রুপ পানছড়িতে সশস্ত্র অবস্থান নেয় এবং যুদ্ধ ঘোষণা করে। এক পর্যায়ে তারা তথাকথিত জেএসএস এমএন লারমা নামধারী সংস্কারবাদী ও সেনা মদদপুষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনীদের সাথে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলেও ঘোষণা দেয়।

এরই ফলশ্রুতিতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি জেএসএস সন্তু গ্রুপের সহযোগিতা পেয়ে সংস্কারবাদী ও নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা গত ৩০ অক্টোবর ২০২৪ পানছড়ির লতিবান ইউনিয়েনের শান্তি রঞ্জন পাড়ায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ইউপিডিএফের ৩ সদস্য সিজন চাকমা, শাসন ত্রিপুরা ও জয়েন চাকমাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

তিনি আরো বলেন, এযাবত সাড়ে তিনশ’র অধিক পার্টির কর্মী-সমর্থককে হত্যা করা হলেও ইউপিডিএফ এখনো সহনশীলতা, ধৈর্য্য ও সংযমের পরিচয় দিয়ে আসছে। জাতি এই দুঃসময়ে যদি জেএসএস ও সেনাসৃষ্ট ঠ্যাঙাড়েরা নিজেদের শোধরাতে না পারে তাহলে তাহলে জাতির দূর্দশা আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।

তিনি শহীদদের আত্মবলিদান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

কার্বারী বৈশখা কুমার ত্রিপুরা বলেন, যে কোন যুদ্ধে একটা প্রতিপক্ষের জন্ম হয়। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ কারা তা আমাদের বুঝতে হবে। নিজের জাতিকে নিজেরা প্রতিপক্ষ মনে করে সংঘাতে লিপ্ত হলে জাতির জন্য তা কখনো মঙ্গলজনক নয়। তাই ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত বন্ধ করা খুবই জরুরী।

রাইচা মারমা তার বক্তব্য বলেন, চুক্তি করেছে জেএসএস, পকেটস্থ হচ্ছে অনেক কিছু, মরছি আমরা পাহাড়িরা, আর বগল বাজাচ্ছে শাসকগোষ্ঠী। তাই ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি না করে কীভাবে অধিকার অর্জিত হয় তা নিয়ে চিন্তা করার আহবান জানান তিনি।

নারী নেত্রী মানেকপুদি চাকমা বলেন, আজ আমরা রীতিমতো হতবাক! কেন এমন হচ্ছে আমাদের ভাইয়েরা? আজ যারা শহীদ হচ্ছে তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখলে মন আমার ব্যকুলতায় ভরে ওঠে, বলতে চাইলে গলায় আটকে যায়। তিনি অবিলম্বে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সাবেক চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমা বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পতন হলেও পাহাড়ে এখনো ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা ব্যক্তিরা রয়ে গেছে। তারা এখনো হাসিনা সরকারের আমলের মতো ব্যক্তি স্বার্থের লোভে বারবার কাপুরুষের পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে, গত ৩০ অক্টোবর সিজন, শাসন ও জয়েন’র হত্যাকাণ্ড তার উজ্জল দৃষ্টান্ত।

যুব নেতা রিপন ত্রিপুরা বলেন, ৩০ অক্টোবর তিন সহযোদ্ধাসহ এযাবৎ অধিকারের জন্য যারা নিজেকে আত্মবলিদান দিয়েছেন সে সকল শহীদ সহযোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের। আমরা এই শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না।

তিনি যতক্ষণ না পর্যন্ত বিপুল, সুনীল লিটন মিঠুন অনিমেষসহ সকল শহীদদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More