রক্ত দেবো, ভিটা-জমি ছাড়বো না!

পানছড়িতে পর্যটন জোন বিরোধী গণসমাবেশ

0
12

14249326_1796613450614677_514185894_nপানছড়ি প্রতিনিধি ॥ “প্রয়োজনে রক্ত দেবো, তবুও ভিটা- জমি ছাড়বো না” আলুটিলায় বিশেষ পর্যটন জোন ও ঝর্ণা টিলায় ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে আজ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, এক প্রতিবাদী গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করে। সকাল দশ’টা বাজতেই কলেজ গেইটস্থ মহামুনি বৌদ্ধ বিহারের সামনের মাঠটি প্রতিবাদী জনতায় ভরে ওঠে।

সকাল দশ টায় সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ২৪১ নং লতিবান মৌজার হেডম্যান ও পানছড়ি ভূমি রক্ষা কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক ভূমিধর রোয়াজা। বক্তব্য রাখেন ২নং চেঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা, পানছড়ি সাঁওতাল উন্নয়ন সংসদ-এর সভাপতি মিন্টু সাঁওতাল, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম পানছড়ি উপজেলা কমিটির সভাপতি অভি রঞ্জন ত্রিপুরা, পানছড়ি কার্বারী এসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক হেম রঞ্জন কার্বারী, পানছড়ি উপজেলার ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, ১ নং লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান প্রত্যুত্তর চাকমা, পানছড়ি মারমা ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা মংশি মার্মা, পানছড়ি উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রত্না তঞ্চঙ্গ্যা ।

এছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা প্রতিনিধি রূপায়ন চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের পানছড়ি শাখার সভাপতি কংজরী মারমা এবং ইউপিডিএফ পানছড়ি উপজেলার সমন্বয়ক জীদং চাকমা প্রমূখ।

সভা সঞ্চালনা করেন মারমা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রমেল মারমা।

panchariপ্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ পর্যটন জোন গড়ে তোলার নামে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলায় ৭০০ একর এবং পানছড়ির ঝর্ণা টিলায় ৭০০ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। এসব জায়গায় বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষজন বংশানুক্রমে শতশত বছর ধরে বসবাস করে আসছে। সেখানে পর্যটন জোন করা হলে অসংখ্য পাহাড়ি পরিবার বাস্তুচ্যুত হবে।

বক্তরা আরো বলেন, বিগত ৬০ দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক তথাকথিত উন্নয়নের নামে কাপ্তাই বাঁধ নির্মান করা হলে, সে সময় একবার বিরাট সংখ্যাক পাহাড়ি বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়। এর প্রায় ৫৫ বছর পর আবার বাঙালি শাসকগোষ্ঠী তথাকথিত উন্নয়নের নামে শত শত একর পাহাড় দখল করে পর্যটন জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। যা আরেকবার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করবে।

সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, আমরা প্রকৃত উন্নয়নের পক্ষে, বিরোধী নই। কিন্তু যে উন্নয়ন স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে তার বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে, সে ধরণের মেকী উন্নয়ন আমরা কোনভাবে মেনে নেব না। অালুটিলা ও ঝর্ণাটিলায় বিশেষ পর্যটন জোন করা হলে উন্নয়নের বিপরীতে স্থানীয়রা ভূমি থেকে উচ্ছেদসহ অপূরনীয় ক্ষতির শিকার হবে।

তাই সমবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে উক্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করে স্থানীয় জনগণের মতামত নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় পানছড়ির আপামর জনগণ তা বাতিলের দাবীতে আরো কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

সমাবেশ শেষে পানছড়ি কলেজ গেইট থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পানছড়ি কলেজ গেইট থেকে শুরু হয়ে বাস র্টামিনাল প্রদক্ষিণ করে মহামুনি বৌদ্ধ বিহারের সামনে এসে শেষ হয়।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.