পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার অধিকার খুবই যৌক্তিক- আনু মুহাম্মদ

0

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের আয়োজিত সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার অধিকার খুবই যৌক্তিক। আমি মনে করি প্রথমবার যে শিক্ষার্থীরা কোনো কারণে অকৃতকার্য হয়েছে তাদের শিক্ষার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। গতকাল বিকেলে আলভী ও সানির নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকায জাতীয় জাদুঘরে সামনে আয়োজিত গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সংহতি সমাবেশ তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা পুনর্বহালের দাবিতে চলমান আন্দোলনের দুই সংগঠক আলভী মাহমুদ ও বখতিয়ার উদ্দিন সানির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশী নির্যাতন বন্ধের দাবিতে শনিবার (৪ জানুয়ারি ২০২৩) বিকেলে ঢাকা শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সহ-সমন্বয়ক বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়ের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. হারুনুর রশিদ, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, মাহা মির্জা, বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক জাফর হোসেন, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম লালটু, একাত্তর টিভির সাংবাদিক সুশান্ত কুমার সিনহা প্রমূখ।

সংহতি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান,গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের তথ্য প্রচার সম্পাদক রিপন জ্যোতি চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহবত শোভন। এছাড়াও  রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।

সংহতি সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমি মনে করি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার অধিকার খুবই যৌক্তিক। প্রথমবার যারা কোনো কারণে অকৃতকার্য হয়েছে তাদের শিক্ষার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এই দাবিটুকুই শিক্ষার্থীরাই জানিয়েছে এবং সেজন্যে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে। সমাবেশ থেকে তিনি গ্রেফতারকৃত দুই শিক্ষার্থীদের মুক্তির করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিমউদ্দীন খান

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিমউদ্দীন খান বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবিতে আন্দোলন করছে তা কোনো অপরাধ নয়। তারপরও তাদের গ্রেফতার করা হল কারণ এই রাষ্ট্র আর জনগনের হাতে নেই। রাষ্ট্র এখন লুটেরারা চালায় এবং ইন্ধন যোগায় সরকার। আবার তাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকেরা যোগ দিয়েছেন। আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ইন্ধন ছাড়া ওদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থের কারণে শিক্ষার্থীদেরকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এরূপ শিক্ষকদের আজ আর কোনো মেরুদন্ড বাকি নেই। কিন্তু এই ধরনের জুলুম বেশিদিন চলবে না, শিক্ষার্থীদের কাছে জবাব দিতে হবে শীঘ্রই।

বজলুল রশিদ ফিরোজ বলেন, এই ঘটনা বিস্ময়কর ও অবাক করার মতো ঘটনা। স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরের পরে এসেও শিক্ষার্থীরা অধিকার আদায় করতে গিয়ে গ্রেফতার হচ্ছে, যা আমাদের জন্যে লজ্জাজনক। যে সার্বজনীন শিক্ষা আমরা পঞ্চাশ বছর ধরে চাইছি তা আমরা এখনো পাইনি। কোনো শাসকগোষ্ঠীই তা পূরণ করতে পারেনি। কারণ সবাই পুঁজিপতি শ্রেণীরই প্রতিনিধিত্ব করেছে। তাই তারা চায় শিক্ষার অধিকারকে যতভাবে পারা যায় সঙ্কুচিত করতে, শিক্ষা গ্রহণের পথকে বাধাগ্রস্থ করতে।

ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক জাফর হোসেন বলেন, দুই সংগঠক মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার জন্যে গ্রেফতার হওয়ার চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই। সরকার এদের গ্রেফতার করেছে এই কারণে যে তারা জনগনের ভোটে নির্বাচিত নয়, তারা জনগণের স্বার্থের বিপরীতে দাড়িয়ে আছে।

লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ চেয়ে গ্রেফতার হওয়া নিকৃষ্ট ও ভয়াবহতম জুলুম। তাদেরকে মুক্ত করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের দাবি নয়, সকল জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কারণ এভাবে ডেকে এনে গ্রেফতার করা ও মিথ্যা মামলা দেওয়া কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে ঘটতে পারে না। ফলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই এই জুলুমের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে।

মাহা মির্জা বলেন, এসব ঘটনা আমাদেরকে আর অবাক করে না। কারণ এগুলো বেশি হচ্ছে। যখন তখন যে কাউকেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রায় ৬০০-৭০০ জন জেলে রয়েছে বিনা কারণে। ক্ষমতাসীনদের মধ্যে যারা দুর্নীতি করে, ধর্ষণ করে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়ে না; ধরে নিয়ে যাওয়া হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। আন্দোলন চলছিল দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষেরই শিক্ষার শেষ সম্বল হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেখানে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবি খুবই যৌক্তিক। পৃথিবীর সর্বোচ্চ খরচে আমরা রাস্তা বানাচ্ছি অথচ দেশে একজন শ্রমিকের সন্তান মেট্রিক পর্যন্ত পড়তে হিমশিম খায়। এই অবস্থায় কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই জেলে নেওয়া হচ্ছে। এই বাংলাদেশ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সংঘবদ্ধ আন্দোলন প্রয়োজন।

একাত্তর টিভির সাংবাদিক সুশান্ত কুমার সিনহা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেওয়ার পিছনে এই শিক্ষার্থীদেরই তো ভূমিকা ছিল। তাদের অধিকারের জন্যে লড়াই করা কখনোই রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি অতীতে যেভাবে ছাত্ররা অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিল, এবারও তারা ছিনিয়ে নেবে।

বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম লালটু বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও রাষ্ট্রের নিপীড়নের জায়গা বিন্দুমাত্র কমেনি। সাত থেকে আটটা গ্রুপ অব কোম্পানি পুরো বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রন করছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক তারাই। শিক্ষার এই বেসরকারীকরণের কারণেই দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা থেকে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। ছাত্রসমাজ ও জনগণ অতীতেও এই বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে লড়েছে, এবারও লড়বে। লড়াই করেই একটি শোষণহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে বলে আশা করছি।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More