পার্বত্য চট্টগ্রামকে তথাকথিত “জেলায় উন্নীতকরণ” বিষয়ে কুদুকছড়িতে আলোচনা সভা

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১ আগষ্ট ২০২৪
“শাসকগোষ্ঠীর রচিত ইতিহাস ছুঁড়ে ফেলুন, প্রকৃত ইতিহাস জানুন” শ্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তথাকথিত “জেলায় উন্নীতকরণ” (১৮৬০) বিষয়ে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে আলোচনা সভা করেছে তিন সংগঠন। অনুষ্ঠিত হয়।
আজ ১ আগষ্ট ২০২৪ বিকাল ৩টায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা শাখাসমূহ যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বারিঝে চাকমা। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক রিতা চাকমার সঞ্চালনায় সভায় আরো আলোচনা করেন ইউপিডিএফের সংগঠক নির্ণয় চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নিশি চাকমা।
ইউপিডিএফ’র সংগঠক নির্ণয় চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক ভূ-খন্ডটি ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও স্বশাসিত রাজ্য ছিল। ১৮২৮ সালের ২১ এপ্রিল ব্রিটিশ কমিশনার হল হেড প্রতিবেদন দিতে গিয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, পাহাড়িরা ব্রিটিশ প্রজা নয়,কর দাতা মাত্র।তাদের উপর আমাদের কর্তৃত্বের কোন অধিকার নেই। কিন্তু ১৮৬০ সালের ১লা আগষ্ট তথাকথিত এক আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা প্রতারণার মাধ্যমে ‘জেলায় উন্নীতকরণ” এর কথা বলে এই ভূ-খণ্ডটিকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ নাম দিয়ে নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেয়।
তিনি আরো বলেন, রানী কালিন্দী তার জীবদ্দশায় কখনই নিজ শাসন কার্যে ঔপনিবেশিক শাসকদের অন্যায় হস্তক্ষেপ ও খবরদারি মেনে নেননি। কালিন্দী রাণীর পূর্বসূরীগণ এ অঞ্চলের স্বাধীন মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে দীর্ঘ দু’যুগেরও (১৭৭২-১৭৯৮) বেশী সময় গৌরবোজ্জ্বল প্রতিরোধ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। রাজা শের দৌল খাঁ, সেনাপতি রুণু খা, যুবরাজ জান বক্স খাঁসহ আরও ক’জন ছিলেন এ প্রতিরোধ যুদ্ধের বীর নায়ক।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র সাংগঠনিক সম্পাদক নিশি চাকমা বলেন, কালিনী রাণী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিগোষ্ঠী ও নারী সমাজে এক আপোষহীন লড়াই সংগ্রামের সাহসী নারীর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমাদের প্রত্যেকের কালিন্দী রাণীর মতো আপোষহীন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে।

সভার সভাপতি ও পিসিপি নেতা বারিঝে চাকমা বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসান ঘটলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ভাগ্য এখনো পরির্বতন হয়নি। বরং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাহাড়ি মানুষের ভূমি বেদখল, নারী ধর্ষণ, গুম, খুন হত্যা বেড়ে চলেছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মানুষকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তাকে বাঙালি বলে গণ্য করা হয়েছে। বর্তমানে সরকার পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের প্রথাগত অধিকারের ন্যূনতম রক্ষা কবজ ১৯০০ সালের রেগুলেশন আদালতের মাধ্যমে বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে। এছাড়া সরকারি চাকরিতে পাহাড়িদের জন্য বরাদ্দ কোটা ৫% থেকে কমিয়ে ১% করা হয়েছে।
তিনি সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।