পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই দিন: পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি উত্থাপন
আজ ১০ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। ১৯৯৭ সালের এদিন আন্দোলনকারী তিন সংগঠন পাহাড়ি গণ পরিষদ (পিজিপি), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মুখে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনের ইতিহাসে এদিন প্রথম বারের মত সুস্পষ্টভাবে এ অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী-সাঁওতাল-গুর্খা (নেপালি)-অহমি এবং পুরাতনবস্তী বাঙালিদেরও মর্যাদার সাথে স্বীকৃতি, অধিকার প্রদানের দাবিসহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রাজনৈতিক বক্তব্য উত্থাপিত হয়েছিল, যা এ যাবৎকালে প্রচারিত “দশ ভাষা-ভাষী ১৩ জাতি” দাবির উন্নত ও উচ্চতর রূপ। এরপর আক্ষরিক অর্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম আর আগের মত থাকেনি, রাজনৈতিক অঙ্গনে সুস্পষ্ট হয় ডিমার্কেশন।
চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে এ সময় সরকারের সাথে জনসংহতি সমিতির বৈঠকের ভেন্যু খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজ থেকে ঢাকাতে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় স্থানান্তর করে তৃতীয় বৈঠক নির্ধারিত হয় ১২ মার্চ ১৯৯৭। মূল দাবি ছাড় দিয়ে সরকারেরর সাথে আপোষে উপনীত হতে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি যখন প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সব কিছু পাকাপাকি করে ফেলতে উদ্যত, জাতীয় জীবনের এমনই এক সন্ধিক্ষণে রাজপথে নেতৃত্বদানকারী তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন পাহাড়ি গণপরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি জানায়। সত্তর-আশি দশকের দাবি-দাওয়া ও বক্তব্য নিয়ে এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই সংগ্রাম এগিয়ে নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। কাজেই পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের এই দাবি যুগের দাবি হয়ে দাঁড়ায়। এর মাধমে পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিধাগ্রস্ত জনতা ও আন্দোলনকামী কর্মীবাহিনী খুঁজে পায় ভবিষ্যৎ পথ চলার সঠিক দিশা।
উল্লেখ্য যে, তিন গণতান্ত্রিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ইন্সটিটিউটের সম্মুখের লনে ৮ মার্চ এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি উত্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ১০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
————————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।