খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়িতে চাকমা ভাষার বর্ণমালা ও ধ্বনি সংক্রান্ত পর্যালোচনা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তাসমূহের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য পৃথক শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা কমিশন গঠনসহ ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭) বিকালে জেলা সদরের মহাজনপাড়াস্থ টঙ কনভেনশন সেন্টারে ‘সরকারের প্রাক-প্রাইমারীতে চাঙমা ভাষা পাঠদান বাস্তবায়নে নিজের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব দাবি উত্থাপন করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট লেখক কে ভি দেবাশীষ চাকমা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক মধুমঙ্গল চাকমা। উক্ত সভায় চাকমা ভাষার বর্ণমালা ও ধ্বনি বিষয়ক পর্যালোচনামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুভাশীষ চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তার ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে দাবিনামা ও প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন মিঠুন চাকমা। সভায় উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সুধীন কুমার চাকমা, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রজ্ঞাবীর চাকমা, জাবারাং এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মথুরা ত্রিপুরা, বিশিষ্ট গীতিকার বিনয় কৃষ্ণ চাকমা, পরিচিতা খীসা, কৃষ্ণচন্দ্র চাকমা, আলো এনজিওর শান্তি বিকাশ চাকমা, সমাজকর্মী ধীমান খীসা প্রমুখ।
সভা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তাসমূহের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার স্বাতন্ত্র্যমূলক বিকাশের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য পৃথক শিক্ষাবোর্ড গঠন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার বিকাশের লক্ষ্যে আলাদা শিক্ষা কমিশন গঠন করা, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসিত ভাষা-সাহিত্য চর্চার একাডেমি প্রতিষ্ঠা, কোনো ধরণের আইনী নিষেধাজ্ঞা ও হয়রানী ব্যতীত নিজস্ব মাতৃভাষায় দৈনিক-সাপ্তাহিক-মাসিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকা-ম্যাগাজিন প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতাসহ সহায়তা প্রদান, কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে জাতিসত্তাসমূহের ভাষা শিক্ষার জন্য বিভাগ গঠন ও ভাষা সাহিত্য বিষয়ক প্ল্যাটফরম গঠন করে উক্ত প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে ভাষা সাহিত্য মেলা ও সম্মেলন আয়োজনসহ ৭ দফা বিস্তারিত দাবিনামা ও প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়।
উপস্থিত আলোচকগণ পর্যালোচনা কমিটি কর্তৃক উত্থাপিত ৭ দফা দাবিনামার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে শুধুমাত্র সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের উদ্যোগে ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশের জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। আলোচনা সভায় উত্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, আমরা মনেকরি পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতির বাধাবন্ধনহীন বিকাশ সাধনের জন্য সরকারী বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেমন সহায়তার হাত প্রসারিত করা প্রয়োজন, তেমনি সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষী সাহিত্যপ্রেমী, সচেতন শিক্ষিত জনগণকে নিজস্ব ভাষা-সাহিত্যের বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা দরকার।
আলোচকগণ বর্তমান সরকারের ৫টি বিভিন্ন জাতিসত্তার নিজেদের মাতৃভাষার শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণকে ইতিবাচক উদ্যোগ আখ্যায়িত করেন। তবে একইসাথে স্কুলসমূহে মাতৃভাষা বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ না করা এবং এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ না নেয়ার জন্য অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
আলোচকগণ আগামীতে আরো এই ধরণের ভাষা চর্চা ও সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা সভা আয়োজন করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন।
বিকাল সাড়ে চারটায় আলোচনা সভা শুরু হয় এবং রাত ৮টা পর্যন্ত উক্ত আলোচনা সভা এক নাগাড়ে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। সভা পরিচালনা করেন শুভাশীষ চাকমা।
সভার পরে মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ’করোদি’ নামক চাকমা ভাষা ও বর্ণমালায় সদ্য প্রকাশিত একটি পত্রিকা সবার হাতে তুলে দেয়া হয়।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।