চট্টগ্রাম : পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে চট্টগ্রাম সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বর্ণ্যাঢ শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
আজ ৭ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর ডিসি হিলে আয়োজিত বৈসাবি অনুষ্ঠান বেলুন উড়িয়ে যৌথভাবে উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট্য মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক রইসুল হক বাহার এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকতা টিপি অং মারমা।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট সমাজসেবক ম্রাপাইংখয় মারমা (নেভী)-এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব চৈতন্য বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আমীর উদ্দীন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের পূর্ব-৩ অঞ্চলের সভাপতি এড. ভূলন লাল ভৌমিক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রইসুল হক বাহার বলেন, ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ র্দীঘ দিন ধরে শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত ছিলো। আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে কিছু কিছু অধিকার আদায় হচ্ছে এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’’
তিনি আরো বলেন, এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি জনগণের সাথে সমতলের জনগণের ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
টিপি অং মারমা বলেন, সংস্কৃতি শুধু গান বাজনা নয়। আমাদের পাহাড়িদের নিজেদের সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট’র সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আমীর উদ্দীন বলেন, ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক সেনা-সেটলার উপস্থিতির কারণে পাহাড়ি জনগণ তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবগুলো উৎসাহ- উদ্দীপনার সাথে পালন করতে পারে না। তিনি অবিলম্বে পাহাড় থেকে সেনা-সেটলার প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।’’
এড. ভূলন লাল ভৌমিক বলেন, ‘‘সমস্ত নিপীড়িত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হবে।’’
যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণ আর তাদের নিজেদের প্রধান উৎসব পালন করতে পারে না। তিনি বৈসাবি সমাবেশ থেকে সংবিধান সম্মত পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা ও বৈসাবি উপলক্ষে ৩ দিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করার জন্য সরকারে প্রতি দাবি জানান।
উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে সকাল সাড়ে ১১টায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা চাকমার রূপগল্পের রংরাং পাখি ও বিলুপ্তপ্রায় বড় হরিণ সম্বলিত ঐতিহ্যবাহী নিজেদের স্ব স্ব জাতীয় পোশাকে পাহাড়ি নর-নারীরা র্যালি বের করে। র্যালিটি চেরাগী মোড় হয়ে আন্দরকিল্লা ঘুরে ডিসি হিলে নজরুল মঞ্চে এসে শেষ হয়। সমাবেশে চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত প্রায় দেড় হাজের মতো পাহাড়ি নর-নারী-শিশু অংশগ্রহ করেন।
বিকাল ২টায় নজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা একক ও দলীয় গানসহ তঞ্চঙ্গ্যা, আসাম ও মুনিপুরী নৃত্য, বম বাঁশ নৃত্য ও গৈরিয়া নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
চট্টগ্রাম সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ম্রাপাইংখয় মারমা তার সমাপনী বক্তব্যে সার্বিক সহযোগিতার জন্য প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন । বৈসাবি ও বাঙলা নববর্ষ ১৪২৪ সকলের সুখ শান্তি কামনা করে বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়।
চট্টগ্রাম সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য বিকাশ চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
——————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।