পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর ওপর যৌন নির্যাতন বেড়েই চলেছে

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Narinijartonডেস্ক রিপোর্ট: পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর ওপর যৌন নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও পাহাড়ি নারীদের উপর ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। গত ৫ মার্চ রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে এক অন্ত:সত্তা নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে গত দুই মাসের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জন পাহাড়ি নারী ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হলেন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গতবছর(২০১৪) পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারী ও শিশু ধর্ষণ-ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন ৩৪ জন। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৭ জনে। এক বছরে এ সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুনে পরিণত হয়েছে।

এ বছর (২০১৫) গত দুই মাসে পাহাড়ি নারী ও শিশুর ওপর যৌন র্নির্যাতনের ঘটনাগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- গত ১৪ জানুয়ারি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কাশখালীতে মো: আইয়ুব আলী কর্তৃক ২য় শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা সাপমারায় ব্রিজ নির্মাণ কাজের শ্রমিক মো: হাবিব কর্তৃক এক পাহাড়ি নারী ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়। ২৮ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়া পাড়ায় দেব বিকাশ বড়ুয়া কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয় এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী। একই দিন বান্দরবানের রুমায় বম সম্মেলনে যাবার পথে সালাউদ্দিন বাপ্পী ও বাদশা মিয়া কর্তৃকধর্ষণের শিকার হয় এক বম কিশোরী। ১ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি ইউনিয়নে মো: সাহাবুদ্দিন নামে এক বাঙালি লাকড়ি আনতে যাওয়া এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ চেষ্টা করে। ২ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং-এ তামাক ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে মো: বাশেদ মিয়া কর্তৃক এক পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নে মো: মো: শাহাআলম নামে এক বাঙালি বাক প্রতিবন্ধী পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণ প্রচেষ্টা চালায়। ১২ ফেব্রুয়ারি মানিকছড়ি উপজেলার যুগ্যছোলা ইউনিয়নে ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক পাহাড়ি শিশু মো: ফারুক কর্তৃক ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীছড়ির বর্মাছড়ি ইউনিয়নের বটতলতে মো: সিরাজ এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ প্রচেষ্টা চালায়।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রচারিত এক প্রচারপত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর ওপর পাশবিক সহিংস হামলা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। নরপশুদের হাত থেকে প্রাইমারি স্কুলে-পড়ুয়া শিশু-প্রতিবন্ধীরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। কাপ্তাই-কাউখালি-রুমা-নাক্ষ্যংছড়ি-ফেণী-তান্দ্যং-মাটিরাঙ্গা-লংগুদু–সর্বত্র একই চিত্র। জুম, ক্ষেত-খামার, ঝর্ণা-নদী-ঘাট, স্কুল-হাটবাজার থেকে ফেরার রাস্তা, লোকালয় হতে বিচ্ছিন্ন নিজ বাড়িও আর নারী-কিশোরী-শিশুর জন্য নিরাপদ নয়। যেখানে সেনা ক্যাম্প, চেকপোস্ট, সেটলার পাড়া রয়েছে, সে এলাকায় যত অঘটন ঘটে থাকে!  এতে বলা হয়,  পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে রয়েছে সেনা-সেটলার সম্পৃক্ততা। আগে সেনা-বিডিআর ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত বাহিনীর লোকজন সে সব অপকর্ম করত, এখন সেটলাররা সে কাজ করে চলেছে! তাদের পেছনে রাষ্ট্রশক্তি না থাকলে তারা এভাবে নারী ধর্ষণের মহোৎসবে মেতে উঠতে পারতো না।

এতে আরো বলা হয়, ধর্ষণ-খুন-হামলা ক্ষমতা-জোরজবরদস্তির ব্যাপার। পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে রয়েছে সরকারের গোপন নির্দেশনা, ‘কিছুতেই ধর্ষণের আলামত দেখানো যাবে না’, যা স্পষ্টতই রাষ্ট্রীয় মদদ। সরকার-প্রশাসনের প্রশ্রয় আছে বলেই সেনা-সেটলাররা ধর্ষণে প্ররোচিত হচ্ছে। চিহ্নিত অপরাধীদের সাজা না হওয়ায় অপরাধ বেড়ে চলেছে। ’৯৬ সালে কল্পনা অপহরণ তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নিকটস্থ কজইছড়ি ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস আনসার সদস্যের সহায়তায় দরজা ভেঙে কল্পনা চাকমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অপহরণ করেছিল। চিহ্নিত অপহরণকারীর বিরুদ্ধে কোন সরকারই আইনী ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রচারপত্রে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতনের বর্ণবাদী চরিত্র অত্যন্ত স্পষ্ট। ধর্ষণকে এখানে জাতিগত প্রভুত্ব বজায় রাখার মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি জাতিকে পদানত রাখার জন্য শাসকদের অন্যতম পন্থা হচ্ছে পরাধীন জাতির জনগণের মধ্যে সব সময় ত্রাস ও ভীতি জারি রাখা। আর এই ভীতি ও ত্রাস জারী রাখার জন্য ধর্ষণ হলো একটি বিশেষ উপায়। মূলতঃ সেটলারদের আগমন ও উপস্থিতির কারণেই এখানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। তার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে ধর্ষণ অপরিচিত ছিল। তাই সেনাবাহিনী ও সেটলারদের প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী ধর্ষণ বন্ধ হবে না।
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More