পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল ও প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে পিসিপি’র নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি
সিএইচটিনিউজ.কম
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি থুইক্যচিং মারমা এবং সাধারণ সম্পাদক রিটন চাকমা আজ ১৮ জুলাই শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজিবি-সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণ ও সেটলার পুনর্বাসনের মাধ্যমে ভূমি বেদখল ও গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা বর্ষণ শিশু-নিরাপরাধ লোক হত্যার তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা প্যালেস্টাইনী জনগণের ন্যায্য লড়াইয়ের প্রতিও সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
বিবৃতিতে পিসিপি’র নেতৃদ্বয় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয়দের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও দীঘিনালার বাবুছড়ায় বিজিবি ব্যাটেলিয়ন সদর দপ্তর নির্মাণ-নারীদের ওপর হামলা-মামলা-সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্র, রুমায় গ্যারিসন সম্প্রসারণ, বাঘাইছড়ির তদেকমারা কিজিং-এ কিয়্যং নির্মাণে বাধা প্রদান; অন্যদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি-রোয়াংছড়ি এবং খাগড়াছড়ির রামগড়-মানিকছড়িতে রাবার বাগান ও বনায়নের নামে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত পাহাড়িদের বাস্তুভিটা থেকে বিতাড়নের চক্রান্ত চলছে। এর ফলে চাক, মুরুং, ত্রিপুরা ও মারমা জাতিসত্তার লোকজন সবচে’ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে বিবৃতিতে তাঁরা মন্তব্য করেছেন।
পিসিপি’র নেতৃদ্বয় বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, মানবতাবাদী সংগঠন ও ব্যক্তিদের ইসরায়েলি বর্বর হামলা রোধে সোচ্চার হবার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে এটাও বলেছেন, বাংলাদেশেও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার ‘জায়নবাদী’ মূর্তি ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণকে বংশপরম্পরার পৈতৃক ভিটেবাড়ি জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ করে সেনা-বিজিবিসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা নির্মাণ ও সম্প্রসারণের সমানতালে বহিরাগত সেটলার পুনর্বাসন করছে।
বিবৃতিতে পিসিপি’র নেতৃদ্বয় রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনে ক্ষমতাসীন সরকারের তোড়জোড় কর্মকা-েরও তীব্র সমালোচনা করে বলেন,‘এতে সরকার নিজ ব্যর্থতা আড়াল করে ‘নব্যসেটলার’ পুনর্বাসনের পন্থা গ্রহণ করেছে। রাজনৈতিক সমাধান না হলে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কল-কারখানা স্থাপন পাহাড়িদের জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দেবে। কাপ্তাই বাঁধ, কর্ণফুলি পেপার মিল-রেয়ন মিল এবং সুইডিশ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট পাহাড়ি জনগণের সামনে জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে “মুখোশবাহিনী”র আদলে “সচেতন যুবসমাজ” নামে একটি ঠ্যাঙারে যুব সংগঠন খাড়া করতে গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতার আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে অভিযোগ করে পিসিপি’র নেতৃদ্বয় বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন,‘সরকার-সেনাবাহিনী পাহাড়ি জনগণের আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে অতীতে রঙ বেরঙের দালাল সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করলেও তাতে প্রকৃত সংগ্রামীদের দমন করা যায় নি, ভবিষ্যতেও তা করা সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা-গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পকেট ভর্তি হবে মাত্র। ১৯৯৫ সালে প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা যেভাবে “মুখোশবাহিনী” প্রতিরোধ ও নির্মূল করতে রাজপথে নেমে এসেছিল, আগামীতেও একই ভূমিকা রাখতে নবগঠিত পিসিপি প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, গেল ১৫-১৬ জুলাই খাগড়াছড়ির নারাঙখিয়াস্থ সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে দু’দিন ব্যাপী বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ২১তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশন সম্পন্ন হয়। সম্মেলনে প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষকসহ দু’শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর সমাবেশ ঘটে। এতে পিসিপি’র সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ওপর আলোচনা-পর্যালোচনা চলে এবং সর্বসম্মতিক্রমে ২৫ সদস্যের একটি নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপুল চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।