বিশেষ প্রতিবেদক।।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সন্তু লারমা ও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আজ ১৭ বছর পূর্ণ হলো। চুক্তি স্বাক্ষরকারী উভয় পক্ষ (সরকার ও জনসংহতি সমিতি) বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করলেও কার্যত চুক্তিটি এখন চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে শান্তির বদলে সৃষ্টি হয়েছে অশান্তি। এই চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে এখন অনেকটা গুরুত্বহীন বস্তু হিসেবেই বিবেচিত। যার কারণে উভয় পক্ষকে চুক্তির বর্ষপূর্তি পালন করে মনে প্রশান্তি আনতে হচ্ছে।
প্রতিবছর ২ ডিসেম্বর ঘনিয়ে আসলেই চুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমা নানা কিসিমের আন্দোলনের ডাক ছাড়েন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার অবশ্য একটু ভিন্ন। এতবছর পুরোনো কর্মসূচিতে ফিরে যাবার হুমকি দিলেও এবার তিনি ১লা মে হতে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারে বসে, সরকারের বেতন ভাতা খেয়ে তিনি কিভাবে অসহযোগ আন্দোলন করবেন? তাহলে এই অসহযোগ আন্দোলনের ধরনটা কেমন হবে?
চুক্তির বর্ষপূর্তির দিন সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না, সরকার প্রতারণা করেছে ইত্যাদি বলে কান্নকাটি করে সন্তু লারমা তার স্বাক্ষর করা ‘কীর্তিময়’ দিনটি স্মরণ করেন। কিন্তু ১৭ বছর ধরে কান্নাকাটি করলেও সরকার এ চুক্তিটির মাধ্যমে সন্তু লারমাকে দিয়ে জুম্ম ধ্বংসের খেলায় মত্ত রয়েছে। চুক্তির লেবাস লাগিয়ে দিয়ে সরকার কার্যত সন্তু লারমা নামক ফ্রাঙ্কেস্টাইন দানবটিকে ছেড়ে দিয়েছে, যা এখন সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে এক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে চুক্তি স্বাক্ষরের ১৭ বছরে সাধারণ জনগণ একটুও শান্তিতে থাকতে পারেনি।
চুক্তির ১৭ বছরে তাই সবকিছুর হিসাব নিকাশ করার চূড়ান্ত সময় উপস্থিত হয়েছে। চুক্তির ফলে কারা লাভবান হয়েছে, কারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সঠিক হিসাব মেলাতে হবে। বুঝতে হবে চুক্তির ফলে প্রধানত লাভবান হয়েছে এ দেশের শাসক শোষক গোষ্ঠি ও সেনাবাহিনী। কাজেই এ চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ার যেমনি সম্ভাবনা নেই, তেমনি চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ারও কোন অবস্থা নেই। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি, সেনাবাহিনী প্রত্যাহারপূর্বক সেনা শাসনের অবসান, সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সরিয়ে নেয়া ও জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ছাড়া এখানে কিছুতেই শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে না।
চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরকারী উভয়পক্ষের মধ্যে যে মেকী ও সাজানো মতবিরোধ, বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য তার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং জনগণের আসল দাবিগুলোকে আড়াল করা; যাতে জনগণ তাদের প্রকৃত দাবি-দাওয়া সামনে রেখে যথার্থ আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করতে না পারে।
২০০৩ সালে রাঙামাটির এসপি হুমায়ুন কবীর পার্বত্য চুক্তিকে ‘মুলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকারের গোপন কথাটিই বলেছিলেন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের কিছু মাথামোটা কথিত বুদ্ধিজীবির দল এসপি সাহেবের এই সত্য কথাটি আজো বুঝতে পারেননি।
কাজেই, বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের প্রকৃত অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গণ আন্দোলন সৃষ্টি করা। এজন্য জনগণের সকল দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া একান্তই জরুরী।
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]
————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।