নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
ফটিকছড়ি(চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট ফটিকছড়ি থানা কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল ১২ নভেম্বর ২০১০ এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে চাজাইমং মারমাকে সভাপতি, নির্মল কান্তি চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও চাইওয়া মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আপ্রুসি মারমা নবগঠিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
কমিটি গঠন উপলক্ষে সকাল ১০:৩০টায় ফটিকছড়ি উপজেলা সদরের শফিকুল হল রুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আপ্রসি মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষীছড়ি থানা শাখার আহ্বায়ক সাইচিমং মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি প্রণয় চাকমা ও চাজাইমং মারমা।
সভায় ফটিকছড়ি উপজেলার খিরাম উচ্চ বিদ্যালয়, নানুপুর কলেজ, নাজিরহাট কলেজ, সোবনছড়ি হাইস্কুল, বটতলী ও বর্মাছড়ি থেকে প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৮৯ সালের লংগদু গণহত্যার রক্তবীজ থেকে জন্ম নেয়া পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এবং বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের বেঁচে থাকার প্রকৃত অধিকার পুর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের এই আন্দোলন কোন শক্তি দমিয়ে রাখতে পারবে না।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য শাসক-শোষখ গোষ্ঠী সুকৌশলী হয়ে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে খাগড়াছড়িতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করে স্বৈরাচারী আচরণ করছে।
বক্তারা ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতির যে কোন সংকটময় মুহুর্তে ছাত্র সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ছাত্র সমাজকে আন্দোলন বিমূখ, অথর্ব, পঙ্গু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। একদিকে মদ, গাঁজা, হেরোইন জাতীয় প্রাণঘাতি মাদক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, অপরদিকে অপসংস্কৃতির বিষ ছড়িয়ে দিয়ে সংগ্রামী চেতনা ও বিপ্লবী আদর্শকে ভোঁতা করে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করার জন্য বক্তারা ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারপূর্বক সেনা শাসন অপারেশন উত্তরণ বাতিলা করা, সেটলার বাঙালিদের সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পৃথক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা সহ জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি মেনে নিয়ে ইউপিডিএফ-এর সাথে আলোচনায় বসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
কমিটি গঠন ও আলোচনা সভা শেষে শফিকুল হল থেকে এক র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি ফটিকছড়ি উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আদালত ভবনে গিয়ে শেষ হয়।