৭ মাসে ধর্ষণ-খুন-নির্যাতনের শিকার ১৪ জন পাহাড়ি নারী-শিশু
[divider style=”normal” top=”20″ bottom=”20″]
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের উপর যৌন হামলার ঘটনার বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।
আজ মঙ্গলবার ৭ আগষ্ট ২০১৮ এক যৌথ বিবৃতিতে উক্ত দুই সংগঠন জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সাত মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০ জন জুম্ম নারী ধর্ষিত হয়েছেন, এদের মধ্যে ২ জনকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। এছাড়া ৪ জন পাহাড়ি নারী ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সীতাকুণ্ডে দুই ত্রিপুরা কিশোরী এবং রাউজানে বৌদ্ধ মন্দিরের অনাথ আশ্রমে এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে তারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা জুম্ম নারীদের নিরাপত্তাহীনতার জন্য পাহাড়ে বিপুল সংখ্যক সেনা ও সেটলার উপস্থিতিকে দায়ি করে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ সমতলের মতো কোন সাধারণ সামাজিক ব্যাধি নয়, বরং শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ি জনগণের উপর জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ধর্ষণ ও যৌন হামলাকে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করে আসছে এবং এই একটি মাত্র কারণে অপরাধীরা জঘন্য অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে।’
তারা বলেন, পাহাড়ে যতদিন সেনা ও সেটলার থাকবে ততদিন ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকবে, পাহাড়ের বিগত তিন-চার দশকের ইতিহাস তাই প্রমাণ করে।
তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তা বিধান ও তাদের উপর যৌন হামলা রোধ করতে দুই নেত্রী অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির পাশাপাশি সেখান থেকে সেনা ও সেটলারদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে দুই সংগঠন জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ৬ আগষ্ট ২০১৮ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার যেসব ঘটনার বর্ণনা দেন তা নিম্নে তুলে ধরা হল:
২১ জানুয়ারি : দিবাগত রাত আনুমানিক ১:৩০টার সময় রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ক্যাম্পের সেনা সদস্য কর্তৃক অরাছড়ি গ্রামে দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করা হয়। এ মধ্যে বড় বোনকে ধর্ষণ ও ছোট বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
২৭ জানুয়ারি : খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের থলিপাড়ায় জনৈক এক সেটলার কর্তৃক ৪৫ বছর বয়সী এক নারীকে ধর্ষণ ও গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
২ ফেব্রুয়ারি : রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী গ্রামে এক সেটলার যুবক কর্তৃক এসএসসি পরীক্ষার্থী এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। ধর্ষণ চেষ্টার সাথে জড়িত সন্দেহে এলাকাবাসী মোঃ ইমান আলীকে (৩৫) ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। ইমান আলী খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়াডের অমরপুর গামের মোঃ আব্দুল লতিফের ছেলে। সে পেশায় একজন টিউবওয়েলের মিস্ত্রি।
৮ মার্চ : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি এলাকায় খাবার পানি আনতে গিয়ে ১৪ বছর বয়সী এক ত্রিপুরা কিশোরী জনৈক সেটলার কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়।
২৫ মার্চ : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের রনেশ কার্বারী পাড়া এলাকায় ২২ বছর বয়সী এক সেটলার দুর্বৃত্ত ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে, কিন্তু এতে ব্যথ হয়ে তাকে সে কুপিয়ে জখম করে।
১৩ এপ্রিল : বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের বালুঝিড়ি বিদ্যামণি পাড়ায় ৪ জন সেটলার যুবক ১৪ বছর বয়সী এক পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণ করে।
১৬ জুন : বান্দরবানের লামায় ম্যাহ্লাউ মারমা নামে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীকে নিজ বাড়িতে ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগ উঠে।
২১ জুন : খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কে বেড়াতে গিয়ে কয়েকজন সেটলার যুবক কর্তৃক এক ত্রিপুরা কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়।
৯ জুলাই : রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের কাশখালী এলাকায় এক সেটলার যুবক কর্তৃক ২৫ বছর বয়সী এক পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হয়।
১৬ জুলাই : খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ১নং খাগড়াছড়ি ইউনিয়নের নুনছড়ি রোয়াজা পাড়া এলাকায় মোঃ এরশাদ নামে এক সেটলার যুবক ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ত্রিপুরা ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।
২৮ জুলাই : খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার নয় মাইল নামক স্থানে কৃত্তিকা ত্রিপুরা (পুর্ণাতি) নামে ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ১১ বছর বয়সী এক ত্রিপুরা শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
৪ আগস্ট : রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ভাসন্যা আদাম ইউপি’র চাইল্যাতলী গ্রামে এক সেটলার যুবক কর্তৃক ১৬ বছর বয়সী এক প্রতিবন্ধী পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। গ্রামবাসীরা ধর্ষণের ঘটনায় মোঃ শওকতকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
৬ আগস্ট : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন গোমতি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের উদয় কুমার কার্বারী পাড়ায় নিজ বাড়িতে এক সেটলার যুবক কর্তৃক এক পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হয়।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে ১৮ মে সীতাকুণ্ডে দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণের পরে হত্যা এবং ৫ জুলাই চট্টগ্রামের রাউজানে বৌদ্ধমন্দিরের অনাথ আশ্রমে এক মারমা কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
——————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।