পিসিপি’র দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে বিশাল ছাত্র সমাবেশ ও র্যালি অনুষ্ঠিত, আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার প্রতিজ্ঞা
খাগড়াছড়ি: বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে আজ ২০ মে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত দশ সহস্রাধিক বিশাল ছাত্র সমাবেশ র্যালি উদ্বোধন করেছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর সভাপতি প্রসিত খীসা। বিশেষভাবে নির্মিত মঞ্চে পর্দা টেনে এ উদ্বোধন সম্পন্ন হয়। এ সময় দু’যুগপূর্তির প্রতীকী হিসেবে ২৪ বার ঘন্টা বেজে চলে এবং কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে দেয় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। অতিথিগণ মঞ্চে উঠলে বিশেষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের ব্যাজ পরিয়ে দেয়। এর আগে অতিথিগণ সমাবেশ স্থলে পৌঁছলে সাইরেনে সংকেত বেজে উঠে। সমাবেশের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করে দৃষ্টি চাকমা। আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর আগে বিভিন্ন শিল্পীরা বিপ্লবী সঙ্গীত পরিবেশন করে।
পিসিপি’র সভাপতি সুমেন চাকমার সভাপতিত্বে খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙখিয়াস্থ সড়ক ও জনপদ বিভাগের খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন গণতান্ত্রিক গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, বিপস্নবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সালমান রহমান। সংগঠনের পÿ থেকে স্বাগত বক্তব্য রেখেছেন সাধারণ সম্পাদক থুই ক্য চিং। ধুধুকছড়ায় সন্তুচক্রের কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
এছাড়া সমাবেশ মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, সচিব চাকমা, প্রদীপন খীসা ও শান্তিদেব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি নতুন কুমার চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি কণিকা দেওয়ান, পার্বত্য নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের চবি শাখার আহ্বায়ক এমএম পারভেজ লেলিন প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা।
উদ্বোধনী ভাষণে ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত খীসা বলেন, বহু বাধা-বিপত্তি, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পিসিপি গঠিত হয়েছিল। দু’যুগ পেরিয়ে পিসিপি নতুন পর্যায়ে পদার্পন করবে। সুবিধাবাদিতা, দালালি, বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় থাকতে হবে।
তিনি বলেন, শুধু প্রাকৃতি দুর্যোগ নয়, মনুষ্য সৃষ্ট বাধা অতিক্রম করার সাহসও পিসিপি কর্মীদের থাকতে হবে। আন্দোলনের সামনে দিনগুলো হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ, আসতে পারে মনুষ্য সৃষ্ট বাধা। সকল প্রকার বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। কোন বাধা আর আমাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই তৃতীয়াংশ সেনাবাহিনী রাখার কোন প্রয়োজন নেই। এ অঞ্চল রক্ষার জন্য যদি তরুণরা সম্পৃক্ত না হয়, তাহলে দখলদার বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সেনাবাহিনী এ অঞ্চল রক্ষা করতে পারবে না। এ অঞ্চলকে রক্ষার জন্য তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে কামান, বেয়নেট উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ঐতিহাসিক লোগাং লংমার্চে তরুণ ছাত্র সমাজই অংশগ্রহণ করেছিল। ছাত্র সমাজের রয়েছে অফুরন্ত শক্তি ও সম্ভাবনা, তাকে দুর্বল করতে নড়েবড়ে চুক্তির সাথে বেঁধে নিঃশেষ করার আয়োজন চলছে। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের তরুণ প্রজন্মকে দ্বিধা বিভক্ত করার জন্য শাসকগোষ্ঠি নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক দ্রব্য বিকিয়ে দিয়ে ছাত্র সমাজকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি বলেন, ছাত্র সমাজের বা পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে কেউ যাতে ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য ছাত্র সমাজকে সজাগ থাকতে হবে। সকল ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ফয়জুল হাকিম তার বক্তব্যে বলেন, যে সময়ে পিসিপি দুই যুগ পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে ঠিক সে সময়েই এদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সরকার এদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তি কাউন্সিল দেশের বাঙালি ভিন্ন চল্লিশটির অধিক জাতির স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করছে।
টিপু বিশ্বাস তার বক্তব্যে বলেন, যে বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো বলতে হবে সমাবেশ সফল হয়েছে। পাহাড়ি জনগণের ভূমি কেড়ে নেয়া যাবে না। সরকার যাদের গুটি হিসেবে ব্যবহার করছে তার বিরুদ্ধে দেশের মেহনতি জনগণ প্রতিবাদ জানায় এবং পাহাড়ি জনগণের ন্যায্য আন্দোলনের পাশে থাকবে।
সমাবেশ শেষে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে দালালি-প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে নেয়ার এবং দেশের যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে উপস্থিত পিসিপি’র কর্মী-সমর্থকগণ। এ সময় পুরো সমাবেশস্থলে ভাব গম্ভীর পরিবেশ বিরাজ করে।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্ররা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়। সমাবেশ শেষে একটি বিশালর্ যালি সমাবেশ স্থল থেকে শুরু হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার, বাসস্টেশন ঘুরে কাসেম স’মিল, খবংপুড়িয়া হয়ে আবার সমাবেশ স্থলে এসে শেষ হয়।