ঢাকা : “পিসিপি’র পতাকাতলে সমবেত হোন, ভবিষ্যত লড়াইয়ের প্রস্তুনি নিন! শাসকগোষ্ঠী ও তার দালালদের সকল ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিয়ে পূর্ণস্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন বেগবান করুন” এই শ্লোগানে আজ ৩০ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার দুপুর ২টায় ঢাকা সেগুনবাগিচার আখতার ইমাম মিলনায়তনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা শাখার ১৫তম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।
কাউন্সিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরাও অংশগ্রহণ করেন।
কাউন্সিলের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মুক্তির সংগ্রাম করতে এ পর্যন্ত যারা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, সেই সকল শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পিসিপি ঢাকা শাখা কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক রোনাল চাকমা এবং পরিচালনা করেন পিসিপি ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়েল ত্রিপুরা। এতে বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফের ঢাকা সংগঠক মাইকেল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রিপন চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দীপা মল্লিক ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক কইংঞ্জনা মারমা এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি ঢাকা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন চাকমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমা তার বক্তব্যে অপহৃত এইচডব্লিএফের নেত্রীদ্বয়ের উদ্ধারের দাবিতে নান্যাচরে আয়োজিত সমাবেশে সেনাবাহিনী কর্তৃক ন্যাক্কারজনক হামলা ও ঢাকা থেকে নান্যাচরে যাওয়া প্রগতিশীল ছাত্র-নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ এইচডব্লিএফের রাঙ্গামাটি জেলা সদস্য রনিকা চাকমা ও স্পীড বোট চালককে জোনে নিয়ে আটকে রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের প্রকৃত মুক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম একমাত্র ইউপিডিএফ’র নেতৃত্বেই পরিচালিত হচ্ছে। তিনি সংক্ষেপে পিসিপি গঠনের সংগ্রামী ইতিহাস তুলে ধরে বর্তমান শিক্ষিত ছাত্র সমাজকে ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপি’র পতাকাতলে সমবেত হয়ে জনতার মুক্তির সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দীপা মল্লিক তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনাশাসনের মধ্য দিয়ে সরকার এক প্রকার জরুরী অবস্থা জারী রেখেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি এবং শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য এখনই সময় পাহাড় ও সমতলে সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলন জোরদার করা।
পিসিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সরকারের প্রতিনিয়ত নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সকল ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন বেগবান করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রোনাল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মুক্তির সংগ্রামে ছাত্র সমাজের ভুমিকা অপরিসীম। বর্তমান জাতির এ দুঃসময় হতে মুক্তির জন্য ছাত্রদেরকে অগ্রণী সৈনিক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্র সমাজ জাগলে পুরো জাতি জাগবে।
তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে- পৃথিবীর বহু জাতির মুক্তির আন্দোলনে ছাত্র সমাজ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও এর ব্যতিক্রম নয়।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায্য অধিকার পুর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত দৃঢ়চিত্তে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষনা করেন পিসিপি কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিপুল চাকমা। রিয়েল ত্রিপুরাকে সভাপতি, রিপন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং সুমন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। অধিবেশনে উপস্থিত সবাই হাততালির মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি পাশ করেন।
নতুন কমিটিকে ফুল দিয়ে বরণ করেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি রোনাল চাকমা। পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিপুল চাকমা নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
————————————
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।