ঢাকা : আজ শুক্রবার (২৯ জুন ২০১৮ ) বিকাল চারটায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সম্মুখে ‘বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন’ বাতিলের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন লড়াকু সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পুলিশের বাধার মুখে বিক্ষোভের রূপ নেয়। তিন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শাহবাগে পুলিশের বাধা পেয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে নিকটবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে সমবেত হয় এবং এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
“বাঙালি জাতীয়তা নয়, সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি দাও” এই শ্লোগানে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, ইউপিডিএফ-এর সংগঠক প্রতীম চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা, সাভার প্রবাসী শ্রমজীবী ফ্রন্টের সভাপতি প্রমোদ জ্যোতি চাকমা। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, ছাত্র ঐক্য ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য আল ফোরকান, বিপ্লবী নারী ফোরামের সদস্য আমেনা আক্তার ও ল্যামপোস্টের সাধারণ সম্পাদক ফারহানা হক শামা ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পৃথিবীতে এক জাতির রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়, এক জাতির রাষ্ট্র পৃথিবীতে নেই বললে চলে। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগ সরকার অন্য জাতিসত্তাদের অস্বীকার করে জোর জবরদস্তিমূলকভাবে বাংলাদেশকে এক জাতি বাঙালির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এ কারণে ২০১১ সালে ৩০ শে জুন সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী করে সংখ্যালঘুর জাতিসত্তাদের স্বীকৃতি না দিয়ে এবং তাদের মতামত তোয়াক্কা না করে উগ্র বাঙালী জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে ।
বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হওয়ার কথা তা শাসকগোষ্ঠীর কারণে হয়নি। মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণ, জাতিসত্তার সমস্যা মীমাংসার কথা থাকলেও ’৭২-এর সংবিধান তা হতে দেয়নি। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর মতো এদেশের শাসকগোষ্ঠী জাতিসত্তাগুলোকে অধিকার বঞ্চিত করেছে।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, সংবিধান সভা নির্বাচন না করে তৎকালীন পাকিস্তান আমলের জাতীয় পরিষদের সদস্যদের দ্বারা ’৭২-এর সংবিধান রচিত হয়েছে। ফলে এতে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। এ সংবিধানে জনগণের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৩০ শে জুন উপমহাদেশের সংগ্রামের এক গুরত্বপূর্ণ দিন। এ দিনে ১৮৫৬ সালে ইংরেজদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল সান্তালরা।শাসকগোষ্ঠীর অধঃপতন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, এই রকম জনগণের সংগ্রামী দিনেও জনগণ বিরোধী কালো আইন পাশ করতে তাদের দ্বিধা করে না।
বিপ্লবী নারী ফোরামের আমেনা আক্তার বলেন, শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রের নামে, নির্বাচনের নামে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে।আমরা যে বৈষম্যহীন সমাজ চেয়েছিলাম তা না হয়ে দেশে দখলদারিত্ব-লুটপাট চলছে।
ল্যামপোস্টের সাধারণ সম্পাদক ফারহানা হক শামা বলেন, শাসকগোষ্ঠী সংবিধানকে খেলনার বস্তুতে পরিণত করেছে। এতে শাসকগোষ্ঠী গণবিরোধী নীতি বারবার অন্তর্ভুক্ত করে চলেছে।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর বলেন, জনগণের মৌলিক বিষয়গুলো এই সংবিধানে পূরণ হয় নি। জাতিসত্তাসমূহের বিকাশের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাসহ সমাজ-সংস্কৃতি বিকাশের কার্যকরী ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী জাতিসত্তাসমূহের বিকাশের লক্ষ্যে এ ধরণের কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ছাত্র ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, সংবিধান তৈরি করার সময় জনগণের মতামত নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মাধ্যমে সকল জাতিগোষ্ঠীর আত্মমর্যদা-অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী তা করেনি।
ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা আল ফোরকান বলেন, সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীতে জাতিসত্তাসমূহকে অস্বীকার করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ন্যাক্কাজনক চেহারা প্রকাশিত হয়েছে। সরকার খুন-গুম-বর্বরতার মাধ্যমে দাঁড়িয়ে আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সমাবেশের সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা বলেন, প্রত্যেক জাতিসত্তা নিজ পরিচয়ে, নিজের কৃষ্টি-কালচার নিয়ে বাঁচতে চায়।এক জন জাতিসত্তার লোক কখনো বাঙালি হতে পারে না। কিন্তু আওয়ামী সরকার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী নীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনে নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।তিনি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির জোর দাবি জানান।
সমাবেশ থেকে তিনি শাহবাগে সমাবেশে পুলিশের বাধার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে খুন অন্যায় ধরপাকড়, খুন, লুটতরাজ বন্ধের দাবিতে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
—————————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।