প্রত্যক্ষদশীর বর্ণনায় মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জুম্ম হত্যার কাহিনী

0

সিএইচটিনিউজ.কম
বিশেষ প্রতিবেদন : পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জুম্ম হত্যা, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটেছেকিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছরেও এসব ঘটনার তেমন কোন বিবরণ আজো প্রকাশিত হয়নি১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী কর্তৃক একটি নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া গাছবান এলাকায়সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কনক বরণ চাকমা ও প্রিয় লাল চাকমা এভাবেই সেদিনের হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন :

কনক বরণ চাকমা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সেদিন ছিল মঙ্গলবার ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালপাঞ্জাবী সৈন্য আর মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সেদিন একটা যুদ্ধ হয়দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলেযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর টিলার উপর দিকে কালো ধোঁয়া দেখা যায়যখন কালো ধোঁয়া দেখা গেল তখন শিরে বাপ নামে এক ব্যক্তি আমার বাবাকে বলছে দেখ দেখ কিসের কালো ধোঁয়া বেরুচ্ছেতখন আমার বাবা তাকে বলেন বোমার আগুনে মনে হয় বাড়িতে আগুন লেগেছেএর কিছুণ পরই মুক্তি বাহিনীর ৪ জন সদস্য আমাদের পাড়ায় আসেআসার পর প্রথমে তারা আমার জেঠার বাড়িতে এবং পরে আমাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়যখন আমাদের বাড়িতে আগুন লাগানো হচ্ছে তখন বাবা বাড়ির বাইরে ছিলেনমুক্তি বাহিনীরা তখন বাবার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে, তোমার ছেলেরা কোথায়? তখন বাবা তারা লুকিয়ে আছে বলে উত্তর দেয়মুক্তিবাহিনীরা সবাইকে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়তাদের নির্দেশ মোতাবেক আমার দুই ভাই বেরিয়ে আসলে মুক্তিবাহিনীরা আমাদের সবাইকে নিয়ে কিনারাম মাষ্টারের বাড়ির উঠানে নিয়ে যায়এ সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা কিনারাম চাকমার কাছ থেকে তুমি কি কর? তুমি কি কর? বলে বার বার জিজ্ঞাসা করেতাদের প্রশ্নের উত্তরে কিনারাম মাষ্টার আমি ডিপি, আমি ডিপি বলে উত্তর দেয়তিনি নিজেকে একজন শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতেও ভুলে যানঅথচ তিনি ছিলেন তখন গাছবান স্কুলের একজন শিক্ষকএ সময় কিনারাম মাষ্টারের কাঁধে একটি গামছা ঝোলানো ছিলমুক্তি বাহিনীর সদস্যরা তার কাছ থেকে গামছা কেড়ে নিয়ে চোখ বেঁধে দিয়ে আমাদের চোখের সামনেই তাকে গুলি করে হত্যা করেএরপর তারা আমার জেঠাতো ভাই, আমার দুই ভাই সহ মোট ৮ জনকে গুলি করে হত্যা করেতাদেরকে হত্যার পর আমাদের আরো অন্য একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়এ সময় আমার বাবা মুক্তি বাহিনীর এক সদস্যের পায়ে পড়ে মা চাইলে মুক্তি বাহিনীর সদস্যটি তখন বাবাকে গালে চড় মেরে মাটিতে ফেলে দেয়এরপর আমাদেরকে সেখানে রেখে মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা চলে গেলে আমরা প্রাণে বেঁচে যাই

প্রিয়লাল চাকমা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমার বাবা সহ আমি বাড়িতে ছিলামবাড়িতে একজন হেডম্যানের সাথে বাবা কথা বলার কারণে আমি ক্ষেতে কাজ করার জন্য বাড়ি থেকে বের হইকিছুদূর যাবার পর পথিমধ্যে মিজোদের একটা গ্রুপকে নাগাল পাইএসময় মুক্তিবাহিনীর একটি গ্রুপ কুকি ছড়া ক্যাম্পে অবস্থান করছিলমিজোরা আমার কাছ থেকে নানা কিছু জিজ্ঞাসার পর ছেড়ে দেয়অবস্থা বেগতিক দেখে আমি আবার বাড়িতে ফিরে আসি

বাড়িতে ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরই মিজোদের সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয়আমরা যে যেদিকে পারি পালানোর চেষ্টা করিঘন্টা খানিক যুদ্ধ চলার পর মিজোরা পালিয়ে গেলে মুক্তিবাহিনীরা গ্রামে ঢুকে বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়পরে মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেতারা আমার ভাইকেও ধরে নিয়ে যায়তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় নি

একই দিনে মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা লোকামনি, নীলমনি, বাজিবো ও পূর্ণ বিজ্ঞান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করেবাজিবো ও পূর্ণ বিজ্ঞান চাকমা এ সময় মাঠে গরু চড়াচ্ছিলেনসেখান থেকে ধরে নিয়ে এসে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছেমুক্তি বাহিনীর সদস্যরা তাদের চার জনকে একই গর্তে কবরে দেয়আমার বাবাকে পরে আমরা অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে কবর দিই।#
——————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More