বগাছড়ি হামলার প্রতিবাদে শাহবাগে সংহতি সমাবেশ

0

সিএইচটিনিউজ.কম

সংহতি সমাবেশের একাংশ
সংহতি সমাবেশের একাংশ

ঢাকা: রাঙ্গামাটির বগাছড়িতে সেনা-সেটলার কর্তৃক পাহাড়ি বসতিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, অব্যাহত ভূমি বেদখল ও কাপ্তাইয়ে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৯ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া তিনটায় ঢাকায় শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে এক সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বগাছড়ি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলও যোগ দেয়। জ্ঞানালোক ধর্মীয় শিক্ষা পরিষদ ব্যানার নিয়ে সংহতি সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। ঢাকাস্থ পাহাড়ি শিক্ষার্থী পেশাজীবী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী সংহতি জানিয়ে উপস্থিত হন।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)-এর সভাপতি মাইকেল চাকমার সভাপতিতে সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফয়জুল হাকিম (সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), টিপু বিশ্বাস (সমন্বয়ক, জাতীয় গণফ্রন্ট), প্রফেসর আনু মহাম্মদ (সদস্য সচিব, জাতীয় স্বার্থে তেল-গ্যাস জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটি), স্বপন আদনান (লেখক, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক), জাফর হোসেন (সমন্বয়ক, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা), হাসিবুর রহমান (সাধারণ সম্পাদক, লেখক শিবির), কল্লোল মোস্তফা (প্রকৌশলী), সাদিয়া আরমান (আইনজীবী), ফখরুদ্দিন আশীষ (সংগঠক, বাসদ-মার্ক্সবাদী); শান্তুনু সুমন (আহ্বায়ক, ছাত্র গণমঞ্চ), জুয়েল বড়ুয়া (তথ্য প্রযুক্তি ও প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক, জ্ঞানালোক ধর্মীয় শিক্ষা পরিষদ), থুইক্যচিং মারমা(সভাপতি, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ), নিরূপা চাকমা (সভাপতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন) ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কাজলী ত্রিপুরা।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন গবেষক স্বপন আদনান, বামে তেল গ্যাস কমিটির সদস্য সচিব আনু মহাম্মদ, কাজী ইকবাল (সাবেক অধ্যক্ষ ও ঢাকা মহানগর লেখক শিবিরের আহ্বায়ক)
সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন গবেষক স্বপন আদনান, বামে তেল গ্যাস কমিটির সদস্য সচিব আনু মহাম্মদ, কাজী ইকবাল (সাবেক অধ্যক্ষ ও ঢাকা মহানগর লেখক শিবিরের আহ্বায়ক)

এছাড়াও সভায় উপস্থিত থেকে সংহতি জানান শেহরীন আরাফাত (মঙ্গলধ্বনি), সাদিউর রহমান  (সম্পাদক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী), বিপ্লব ভট্টাচার্য (সভাপতি, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন), সৌরভ রায় (বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতা), ইমদাদ হোসেন (বিজ্ঞান চেতনা পরিষদ) ও কাজী ইকবাল (প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও ঢাকা মহানগর লেখক শিবিরের আহ্বায়ক)।

সংহতি সমাবেশের সাথে একাত্মতা জানিয়ে আয়োজকদের সাথে যোগাযোগ করেছেন নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানস চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক আমেনা মহসিন ও মেঘনাগুহ ঠাকুরতা।

সমাবেশে গবেষক স্বপন আদনান বলেন, তথাকথিত শান্তিচুক্তি ধোঁকা দেয়ার সামিল, তাতে পাহাড়ে সমস্যার সমাধান হয় নি। ভূমি কমিশনের কথা লেখা আছে, তার কাজ পাহাড়িদের ভূমি ফিরিয়ে দেয়া। অথচ তা অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। সে কারণে চুক্তির পরও ভূমি বেদখল অব্যাহত রয়েছে। ভূমি বেদখলে এখন বিভিন্ন ব্যক্তিগত কোম্পানিও জড়িয়ে পড়েছে। ‘গবেষক স্বপন আদনান সেনা-সেটলারদের ভূমি বেদখলদারিত্বের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। স্বপন আদনান আরও বলেন, ভূমি বেদখলের জন্য নানা উছিলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আনারস বাগান কেটে দেয়ার অভিযোগও আসলে উছিলা মাত্র। অপহরণ নাটকও তো সাজানো হয়েছিল। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের টিমের সদস্য হিসেবে রাঙ্গামাটি সফরে গিয়ে আক্রান্ত হবার অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, থেমে গেলে হবে না। দুর্বৃত্তরা যাতে পার না পায় সে লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করতে হবে।

জ্ঞানালোক ধর্মীয় শিক্ষা পরিষদ-এর নেতা-কর্মীগণ ব্যানারসহ সমাবেশে অংশগ্রহণ  করেন।
জ্ঞানালোক ধর্মীয় শিক্ষা পরিষদ-এর নেতা-কর্মীগণ ব্যানারসহ সমাবেশে অংশগ্রহণ
করেন।

প্রফেসর আনু মহম্মদ বলেন, পাহাড় জনগণের সম্পদ। বহিরাগত সেটলারদের দিয়ে তা দখল করা হচ্ছে। পাহাড়ের সমস্যা হচ্ছে ভূমি সমস্যা, তা সমাধান না হলে নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, আগে বাইশ পরিবার ছিল, এখন হয়েছে বাইশ হাজার পরিবার। এরাই এখন সর্বত্র লুটপাট ও ভূমি বেদখল করছে। ভূমিদস্যুরা পাহাড়িদের জমি কেড়ে নিয়ে দখলদারিত্ব কায়েম করছে। এ বাইশ হাজার পরিবারের সাথেই জনগণকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী থাকলে, পাহাড়িদের জমি ফেরত দেয়া না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কাজলী ত্রিপুরা ঘটনার বর্ণনা দেন এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। পিসিপি’র সভাপতি থুইক্যচিং মারমা বিজয় দিবসে বগাছড়ির হামলাকে নব্য রাজাকারদের কাজ বলে মন্তব্য করেন। যারা আনারস বাগান কেটে দেয়ার গল্প করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তিনি তাদের দালাল বেঈমান হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা দিয়ে আন্দোলন জোরদারের লক্ষ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More