সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটি: নানিয়ারচরের বগাছড়িতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক তিন পাহাড়ি গ্রামে বসতবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত সেটেলার বাঙালি ও সেনা সদস্যদের গ্রেফতারসহ ৫ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে সুরিদাস পাড়া, বগাছড়ি ও নবীন তালুকদার পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বুড়িঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রমোদ বিকাশ খীসা, ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমর জীবন চাকমা, সাবেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নানিয়াচর ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সুপন চাকমা, গ্রাম প্রধান রাম কার্বারী, ক্ষতিগ্রস্ত প্রীতিবালা চাকমা, সুবিন্টু চাকমা, আনন্দ চাকমা সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। এর আগে রবিবার নানিয়াচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ৫ দফা দাবির অন্যান্য দাবিগুলো হলো-ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়িদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপুরণসহ নিজেদের জায়গায় পুনর্বাসন, করুণা বন বিহার থেকে লুট করা বুদ্ধমুর্তি উদ্ধার করে ফেরত দেয়া, ভবিষ্যতে বুদ্ধ বিহারে হামলা ও বৌদ্ধভিক্ষুদের মারধর করা হবে না মর্মে গ্যারান্টি, বগাছড়ি, দিজেনপাড়া, পুলিপাড়া, নানাক্রুম ও বুড়িঘাট এলাকায় ভুমি বেদখল বন্ধ ও দখলকৃত ভুমি ফেরত দেয়া, পাহাড়িদের ওপর হামলা ঘটনা যাতে না ঘটে তার নিশ্চয়তা দেয়া এবং বগাছড়ি, দিজেন পাড়া, পুলি পাড়া, নানাক্রুম ও বুড়িঘাট এলাকা থেকে বাঙালিদের সরিয়ে নিয়ে সমতলে পুনর্বাসন করা।
স্মারকলিপিতে বলা হয় ১৬ ডিসেম্বর নানিয়াচরের চৌদ্দ মাইল এলাকায় পাশাপাশি তিনটি পাহাড়ি গ্রাম বগাছড়ি, সুরিদাসপাড়া ও নবীন তালুকদার পাড়ায় একদল সেটেলার বাঙালি হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট, ৫০টি বসতবাড়ি, ৭টি দোকান পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া স্থানীয় করুণা বন বিহারের ৫টি বুদ্ধমুর্তি লুট-ভাংচুর ও বিহারের অধ্যক্ষ ওবাসা ভিক্ষুকে মারধর করা হয়। হামলার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের যৌক্তিক দাবিগুলো পুরণ করছে না। অন্যদিকে বাঙালিরা আবারও হামলার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এতে বলা হয় নানিয়ারচরের বগাছড়ি ও আশেপাশের এলাকায় পাহাড়িদের শ’শ’ একর জমি সেটেলার বাঙালিরা বেদখল করে নিয়েছে। ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে শান্তিপুর্ণ প্রতিবাদ এবং প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ সময় জেলা প্রশাসক তাদেরকে আশ্বস্ত হবার মতো তেমন কোন আশ্বাস দিতে পারেননি। তবে তিনি সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণের জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ঘটনার পরদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দীপঙ্কর তালুকদার, ফিরোজা বেগন চিনু এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী দিতে গেলে অপ্রতুল হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা তা গ্রহণ করেনি। বর্তমানে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এলাকা, সংগঠন ও ব্যক্তির উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।