বন্দুকভাঙায় ভূমি বেদখল করে সেনা ক্যাম্প নির্মাণের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন

0
বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের মারিচুকে ভূমি বেদখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন করে বন্দুকভাঙা ভূমি রক্ষা কমিটি। 

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

রাঙামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের মারিচুকে ভূমি বেদখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে এবং ধুতাঙ্গ মৌন অরণ্য কুটিরের নামে মিথ্যা প্রচারণা চালানোর প্রতিবাদে রাঙামাটি সদরে মানববন্ধন করেছে বন্দুকভাঙা ভূমি রক্ষা কমিটি।

আজ শুক্রবার (১০ জানুয়ারি ২০২৫) দুপুর ১২টার সময় পুরাতন বাসস্টেশনের ফিসারী বাঁধের মূল সড়কে আধা ঘন্টাব্যাপি অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বন্দুকভাঙ্গা ভুমি রক্ষা কমিটির সদস্য আলো জীবন চাকমা।

লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন  আমাদের বন্দুকভাঙা-যমচুক-মারিচুক এলাকাটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ একটি অঞ্চল। অথচ আমরা জানতে পেরেছি তা সত্বেও এখানে জমি বেদখল করে একটি নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ক্যাম্পের জন্য যাদের জমি বেদখল করা হতে পারে বলে আমরা জেনেছি, তারা হলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ শান্তি কুমার চাকমা, লক্ষী কুমার চাকমা, বয়স ৭৫, ও শান্তি রঞ্জন চাকমা, বয়স ৫৫। তারা সবাই বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের অধীন ডেবাছড়া (মারিচুক মোন) গ্রামের বাসিন্দা। তাদের জমির পরিমাণ প্রত্যেকের ৫ একর করে মোট ১৫ একর। তাদের পিতামহ আগার পেদা চাকমা কাপ্তাই বাঁধের কারণে উদ্বাস্তু হয়ে হারিক্ষ্যং-এর চেঙ্গীপাড়া থেকে বর্তমান মারিচুক পাহাড়ে এসে জুম চাষ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই জমিতে তাদের লাগানো বিভিন্ন ফলজ, বনজ, ঔষধী গাছ ও সেগুন বাগান রয়েছে। এই জমি দখল করে ক্যাম্প করা হলে তাদের জীবন ধারণের আর কোন উপায় থাকবে না।

তিনি আরো বলেন, ক্যাম্প স্থাপনের জন্য বর্তমানে ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছে। এলাকার লোকজনকে বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না, এবং বাইরের কাউকেও সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, এলাকাবাসীকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মালামাল বহনের কাজে বিনা পারিশ্রমিকে জোরপূর্বক বেগার খাটানো হচ্ছে, যা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি। মোট কথা, এলাকাবাসীরা এখন ভয়ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।

উক্ত তিন দরিদ্র গ্রামবাসীর জমিতে ক্যাম্প নির্মাণ করা হলে তারা ঐ জমির ভোগদখল থেকে বঞ্চিত হবেন উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে আলো জীবন চাকমা বলেন, শুধু তারা নয়, আশেপাশের সকল গ্রামাবাসীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ক্যাম্পের আশেপাশে আরও যাদের জমি রয়েছে, তারাও আর তাদের জমিতে যেতে পারবে না। গ্রামের মেয়েরা জঙ্গলে গিয়ে বন্য তরকারী, ফলমূল, লাকড়ি, দৈনন্দিন নিত্য ব্যবহারের জন্য গাছ-বাঁশ, বেইন বা কোমর তাঁতের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে পারবে না। এমনিতে মারিচুকসহ আশেপাশের এলাকায় চরম পানি সংকট রয়েছে। ক্যাম্পের জন্য পাহাড়, বন ও গাছপালা কাটা হলে তাতে এই সংকট তীব্রতর হবে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক কথায়, ক্যাম্প স্থাপন করা হলে গ্রামের জনগণের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হবে, এমনকি সেখানে টিকে থাকাই তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা জানি না, কী কারণে ক্যাম্প স্থাপনের কথা সরকার বা কর্তৃপক্ষ ভাবছে। সবাই জানে আমাদের এলাকায় কোন সন্ত্রাসী থাকে না। চাঁদাবাজির উপদ্রবও আমাদের এলাকায় নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অত্যন্ত ভালো। এলাকার কেউ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য আবেদনও করেনি। এলাকাবাসীর মতামত না নিয়ে সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে এই ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। তাই যদি ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা এলাকাবাসীর স্বার্থ বিরোধী সেই সিদ্ধান্ত মানব না।

আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, আমাদের মারিচুক এলাকায় ক্যাম্প স্থাপনের কোন প্রয়োজন নেই। আমরা ক্যাম্প চাই না। আমরা সরকার ও কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি, আমাদের এলাকায় ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা বাদ দেয়া হোক।

লিখিত বক্তব্যে তিনি ধূতাঙ্গ মোন অরণ্য কুটির নামে একটি বৌদ্ধ বিহার সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সম্প্রতি পাগলিছড়া গ্রামের নিকটে অবস্থিত এই বৌদ্ধ বিহারের প্রাঙ্গনকে একটি রাজনৈতিক দলের প্রশিক্ষণ মাঠ হিসেবে সরকারের একটি সংস্থা থেকে ছবিসহ প্রচার করা হয়েছে, যা ধর্মপ্রাণ এলাকাবাসীকে মর্মাহত ও একইসাথে উদ্বিগ্ন করেছে। সংবাদ মাধ্যমে এভাবে জ্বলজ্যান্ত মিথ্যা প্রচারের পর উক্ত কুটিরের শ্রদ্ধেয় ভান্তে ও মুরুব্বীরা কর্তৃপক্ষকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চান। কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কেবল এই বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে, উক্ত মিথ্যা প্রচারণায় কুটিরের কোন সমস্যা হবে না।

কিন্তু যারা এই মিথ্যা প্রচারের সাথে জড়িত তারা কোন ভুল স্বীকার করেনি এবং ক্ষমাও চায়নি। আমরা মনে করি এটা নিছক খেয়ালি বা মিথ্যা প্রচার নয়, এটা একদিকে যেমন আমাদের ধর্ম চর্চায় হুমকি সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে তেমনি তা অসৎ উদ্দেশ্য-প্রণোদিত। যারা মিথ্যা প্রচার করেছে তারা সদ জ্ঞানেই তা করেছে। কারণ ৩ ডিসেম্বর প্রচারের আগের দিন কর্তৃপক্ষ কুটিরে গিয়ে ছবি তুলে নিয়ে আসে। সে কারণে কুটিরের জমি বেদখল করে সেখানে কোন নিরাপত্তা ক্যাম্প বা অন্য কোন স্থাপনা নির্মাণের জন্য এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে কী না তা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অন্যদিকে যমচুক পাহাড়ে একটি হ্যালিপ্যাড নির্মাণের জন্য কুটিরের (বনবিহার) ৬ বছর বয়সী ১৫০টির মত সুপারি গাছ কেটে দেয়া হয়েছে। এজন্য বিহার কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। এখানে হ্যালিপ্যাড নির্মাণ করা হলে তাতে ভিক্ষুদের ধ্যান-সাধনায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে এবং এলাকাবাসীর ধর্মচর্চাও বাধাগ্রস্ত হবে।

মানববন্ধন থেকে সরকার ও কর্তৃপক্ষের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো:

১) অবিলম্বে মারিচুক মোনে বা পাহাড়ে জমি বেদখল করে নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।

২) উক্ত এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে হবে।

৩) গ্রামবাসীদেরকে হয়রানি ও বিনা পারিশ্রমিকে জোরপূর্বক বেগার খাটানো বন্ধ করতে হবে।

৪) ধূতাঙ্গ মোন অরণ্য কুটির সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার বন্ধ করতে হবে এবং ইতিমধ্যে কুটির সম্পর্কে যে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে তার জন্য ভান্তে ও কুটির কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা প্রার্থনা করতে হবে ও  সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংশোধনী দিতে হবে।

৫) যমচুকে হ্যালিপ্যাড নির্মাণের জন্য কেটে দেয়া সুপারি গাছের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, এ জন্য কুটির কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং হ্যালিপ্যাড নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। খবর প্রেস বিজ্ঞপ্তি।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More