।। মন্তব্য প্রতিবেদন।।
গেল ২ ডিসেম্বর শুক্রবার ছিল রাঙামাটির নান্যাচর সদর উপজেলা হাই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন। নির্বাচন পরিচালনা করতে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে এতে ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম সাদেক।
আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে ভোটারদের যোগ্যতা নিয়ে স্কুলের এক সেটলার শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সাথে প্রিজাইডিং অফিসারের সামান্য বাদানুবাদ হয়। সেটলার শিক্ষার্থীর অভিভাবক ভোটারদের প্রত্যেককে ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দেয়। নির্বাচনী বিধিতে এমন বিধান নেই বলে জানিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন শুরুর উদ্যোগ নিতে গেলে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্প থেকে ক্যাপ্টেন ইমরানের নেতৃত্বে একদল সেনাদল স্কুলে ঢুকে পড়ে। ‘এখনই নির্বাচন বন্ধ করেন!’–এই মর্মে নির্দেশ জারি করে ক্যাপ্টেন ইমরান নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এতে স্কুলের অফিস কক্ষে উপবিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারসহ শিক্ষক, গণ্যমান্য ব্যক্তি, অভিভাবকগণ সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েন। ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন উপলক্ষে স্কুলে সমবেত গণ্যমান্য ব্যক্তি এত লোকের উপস্থিতি সত্ত্বেও কাউকে তোয়াক্কা না করে একজন সামান্য ক্যাপ্টেন পদবীর সেনা কর্মকর্তার এ ধরনের অন্যায় ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে উপস্থিত সবাই ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে এলাকায় জনমনে অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছে।
একটা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অতি আবশ্যকীয় বিধান এবং তা নিয়মিত কার্যক্রমের অংশও। কিন্তু নান্যাচর স্কুলে কোন ক্ষমতা বলে একজন সেনা ক্যাপ্টেন ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে, তার কোন যুক্তি প্রিজাইডিং অফিসারসহ উপস্থিত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ খুঁজে পান নি। সেনা হুমকির মুখে নান্যাচর স্কুলে আদৌ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে কিনা এ নিয়েও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ আশঙ্কা করছেন। সেনা কর্মকর্তারা নির্বাচন বিরোধী, তারা নির্বাচন হতে দিতে চান না। নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পের অনুমোদন না নিয়ে নির্বাচন করা যাবে না বলেও অনেকে মনে করছেন। কেউ কেউ এমনও ধারণা করছেন যে, যেহেতু নির্বাচন গণতান্ত্রিক রীতি পদ্ধতির সাথে সেনাবাহিনী অভ্যস্ত নয়, তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অপারেশন উত্তরণ’ আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ‘১১দফা নির্দেশনা’ জারি থাকায় একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তার পোয়াবারো অবস্থা। তারা নিজেদের মনে করে সর্বেসর্বা, স্কুলের শিক্ষকদের (কেউ কেউ উক্ত ক্যাপ্টেনের শিক্ষকের সমতুল্য) ও সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি কাউকে তোয়াক্কা করে না। দেশের অন্যত্র না হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে কায়েমী স্বার্থবাদী একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তা ফৌজী শাসন জারি রেখে হাত পাকাতে চায়। যাতে একদিন পুরো দেশের কর্তৃত্বভার ফৌজী শাসকদের নিতে সুবিধে হয়।
বিগত জরুরি অবস্থার সময় দেশে যেমন অঘোষিত ফৌজী শাসন জারি ছিল, ঠিক সে ধরনের বুনো আকাঙ্ক্ষায় বিভোর ছিল এক শ্রেণীর সেনা কর্মকর্তা। সে সময় ২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলার মাঠের বাদানুবাদ কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়েছিল। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকগণও রেহাই পান নি। জরুরি অবস্থার সময় সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যত্র ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে কী আচরণ করেছে, তা সচেতন নাগরিকরা ভুলে যান নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা নির্যাতনের বিরম্নদ্ধে এখনও ‘২৩ আগস্ট’ কাল দিবস পালিত হয়।
পাকিস্তানপন্থী একশ্রেণীর কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর লেবাসে আসলে পাকিস্তানি ভাবধারা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় রয়েছে, তা তারা নিজেরাই বিভিন্ন সময়ে জানান দিয়ে থাকে। ফৌজী শাসন কায়েম করে এরা জনগণকে বিভক্ত করে দেশকে পাকিস্তানের মত বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়ার ফন্দি আঁটছে, তা অভিজ্ঞমহলের অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। বগাছড়িতে ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়ে পাকিস্তানপন্থী সেনা কর্মকর্তারা নিজেদের স্বরূপ উন্মোচন করে ফেলেছিল। এবারও ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে তারা তাদের পাকিস্তানের পরাজয়ের শোধ নিতে নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং ২ ডিসেম্বর নান্যাচর স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বানচাল করে দেয়া তারই একটি পূর্বাভাষ, যাকে ‘মিনি সামরিক অভ্যুত্থানের মহড়া’ বলে একজন মন্তব্য করেছেন। #
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।