বন ধ্বংস করে দীঘিনালায় রাস্তা নির্মাণ চলছে

0
379

দীঘিনালা প্রতিনিধি ।। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলাধীন বাবুছড়া ইউনিয়নে ধনপাতা থেকে নারেইছড়ি পর্যন্ত ১০-১২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। এতে বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের উপর বিরাট ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।

গত ১০-১৫ দিন আগে বিজিবি এই নির্মাণ কাজ শুরু করে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এখন পযন্ত কেবলমাত্র রাস্তার জন্য মাটি ও গাছ কাটা হচ্ছে। পরে ইট বিছানোর পর পাকা করা হতে পারে।

স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, যাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা কাটা হচ্ছে তাদের সাথে বিজিবি কোন আলোচনা করেনি, ক্ষতিপূরণও দেয়নি। এমনকি এলাকার হেডম্যান কিংবা অন্য কারও মতামতও নেয়া হয়নি।

রাস্তা নির্মাণের ফলে কালেন্দ্র কার্বারী পাড়ার ২০ পরিবার, পাকুজ্যাছড়ি গ্রামের ১৪ পরিবার ও ধীরেন্দ্র পাড়ার ৮ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ তাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তাটি নেয়া হচ্ছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই রাস্তা তাদের কোন উপকারে আসবে না। কারণ নারেইছড়িবাসী বাবুছড়ার সাথে যোগাযোগের জন্য নদী পথই ব্যবহার করে থাকে। বিজিবিও একই পথ ব্যবহার করে।

যে রাস্তাটি তৈরি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ নতুন। সেখানে আগে কোন পাহাড়ি পথ ছিল না। তাছাড়া যেদিকে রাস্তাটি নেয়া হচ্ছে সেদিকে কোন জনবসতি নেই। কেবল বিজিবি তাদের নারেইছড়ি ক্যাম্পের সাথে যোগাযোগের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করছে। এই রাস্তা কেবল বিজিবির কতিপয় সদস্য ব্যবহার করবে।

তাই কেবল বিজিবির গুটিকয় সদস্যের জন্য বন ও পরিবেশ ধ্বংস করে এই রাস্তাটি নির্মাণের প্রয়োজন নেই বলে জনগণের অভিমত।

এই রাস্তা নির্মাণ করা হলে বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। গাছ ব্যবসায়ীদের জন্য সেখান থকে গাছ আহরণের দূয়ার খুলে যাবে। ফলে দুই এক বছরের মধ্যেই সেখানকার বন উজার হয়ে যাবে।

২০০৫-৬ সালে সাজেকে বাঘাইহাট-রুইলুই সড়ক নির্মাণের পর ২-৩ বছরের মধ্যেই সেখানকার বন সাবাড় হয়ে যায়। এক সময় ঘন ও গহীন বনে আচ্ছাদিত সাজেক এখন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। বিশাল আকৃতির গর্জন, চাপালিসহ বহু মূল্যবান গাছ ধ্বংস হয়ে গেছে।

রাস্তা নির্মাণের আগে সাজেকে ছিল অনেক বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর অভয়ারণ্য। বর্তমানে সেখানে বাঘের অস্তিত্ব নেই এবং অন্যা্ন্য বন্য পশুপাখির সংখ্যাও নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। গবেষকরা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেদিকে পাকা রাস্তা হয়েছে সেদিকের বন ধ্বংস হয়ে গেছে। কারণ পাকা রাস্তা হলে ব্যবসায়ীদের গাছ আহরণে বিরাট সুবিধা হয়ে যায়।

ধনপাতা-নারেইছড়ি রাস্তা নির্মাণ করা হলে সেই অঞ্চলের বন ধ্বংসের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়বে। বন উজার হয়ে যাওয়ার ফলে নদী-ঝর্ণার ‍পানি শুকিয়ে যাবে এবং মৃত্তিকা ক্ষয় হবে। এক কথায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাবুছড়ার একজন হাই স্কুলের শিক্ষক বলেন, সরকার সব সময় বন ও পরিবেশ রক্ষার কথা বলে থাকে। পাঠ্যপুস্তকেও এ বিষয়ে আজকাল শিক্ষা দেয়া হয়। অথচ সরকার নিজেই বন ও পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে।

তিনি বলেন এই রাস্তা না হলেও চলে। কারণ নারেইছড়ির সাথে যোগাযোগের জন্য নদীপথ খারাপ নয়। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সহজে যাওয়া আসা করা যায়। রাস্তাটি হলে যাতায়াত কিছুটা সহজ হবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এতে বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কাজেই বন ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এই রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করা জরুরী বলে তিনি মনে করেন।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.