বর্মাছড়িতে সেনাবাহিনীর অবস্থান, কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান আয়োজনে জনমনে আতঙ্ক

0

সেনাক্যাম্প স্থাপনের পাঁয়তারা!

সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘোরাফেরা করছে। 


বর্মাছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ২০ অক্টোবার ২০২৫

খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলাধীন বর্মাছড়ি ইউনিয়নের অন্তর্গত আর্যকল্যাণ বনবিহারে আগামীকাল (২১ অক্টোবর) হতে শুরু হতে যাচ্ছে ১৮তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে বিহারের আওতাধীন বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধর্মাবলম্বীরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিহারে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধর্মীয় গুরুদের রুম পরিস্কার করা সহ বিভিন্ন কাজ করছে।

কিন্তু গত ১৮ অক্টোবর ২০২৫ খিরাম আর্মি ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প কমান্ডার মেজর সাইফুর রহমান তুর্যোর নেতৃত্বে ২০ জনের একটি সেনা দল বর্মাছড়ি বাজারে যায়। এর পর থেকেই সেনা দলটি প্রতিদিন আর্যকল্যাণ বন বিহার ও বিহারের পার্শবতী গ্রামে প্রতিনিয়ত ঘোরাফেরা করছে। সেনাদের এমন ঘোরাফেরার কারণে বিহারের অনুষ্ঠানের জন্য কাজে আসা লোকজনের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নারীদের বেশি সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষিকা বলেন, আগামীকাল বিহারে অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে। অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে রাত্রে বেইন বুনন অনুষ্ঠান রয়েছে। এতে বিভিন্ন দুর দূরান্ত থেকে ভান্তেদের জন্য চীবর বুনতে নারীরা বিহারে আসবে। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতির কারণে নারীরা বিহারে আসতে ভয় পাচ্ছেন।

বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী কর্তৃক নারী নির্যাতনের কথা তুলে ধরে শিক্ষিকা বলেন, এখানেও সে ধরনের কোন ঘটনা ঘটে কিনা নারীরা সে নিয়ে ভয়ের মধ্যে রয়েছে। নারীরা যদি অংশগ্রহণ না করে তাহলে তো বেইন বুনন অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটবে বলে তিনি জানান।

তিনি সংশ্লিষ্ট সেনা কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের বর্মাছড়ি বাজারের কাছাকাছি খিরাম ক্যাম্প ও শুকনাছড়ি ক্যাম্প রয়েছে। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত বর্মাছড়িতে টহল দেওয়া হয়। অন্যান্য এলাকায় যেভাবে অপরাধ সংঘটিত হয় আমাদের এখানে সে ধরনের কোন আপরাধমূলক ঘটনা ঘটে না। তারপরেও বর্মাছড়িতে এই ধরনের সেনা উপস্থিতি কেন?’

সেনারা বর্তমানে ফটিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ বিহার ও আর্যকল্যাণ বন বিহারের পাশের জায়গায় কয়েকটি তাঁবু খাটিয়ে রেখেছে। তবে তারা রাতে সেখানে অবস্থান না করে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অবস্থান করে থাকে।

ফটিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পাশে একটি বৌদ্ধ বিহারের জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে রেখেছে সেনা সদস্যরা। 

এদিকে, এই রিপোর্ট লেখার সময় লক্ষীছড়ি জোন থেকে আরও ২০ জনের একটি সেনা দল খিরাম ক্যাম্পে পোঁছেছে। সন্ধ্যার দিকে উক্ত সেনা দলটিও বর্মাছড়িতে আসবে বলে জানা গেছে। তাদের সাথে দা, কোদাল, খন্তা, হাত করাত ও তাঁবু ৪০টি রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

কঠিন চীবর দানকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর এমন তৎপরতায় জনমনে উদ্বেগ ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। 

তবে স্থানীয়দের ধারণা, বর্মাছড়ি বাজার এলাকায় ক্যাম্প স্থাপনের জন্য এভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে ও সেনা সদস্যদের জমায়েত করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ অক্টোবর থেকে এক সপ্তাহের মতো তারা সেখানে অবস্থান করেছিল। সে সময়ও তারা ফটিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশে একটি বৌদ্ধ বিহারের জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে রেখেছিল এবং ওই জায়গাটি খাস কিনা ও জায়গার মালিক সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছিল।

এলাকার জনগণ বর্মাছড়ি এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর নতুন কোন ক্যাম্প স্থাপনের দারকার নেই বলে মনে করেন এবং ক্যাম্প দেয়ার চেষ্টা করা হলে তা মেনে নেবেন না বলে স্পষ্টভাবে জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More