বান্দরবানে থানচিতে বিজিবি কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম
বান্দরবানের থানচিসহ পাহাড়ে অব্যাহত ভূমি বেদখল, বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ, বিজিবি ক্যাম্প ও সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণ বন্ধের দাবিতে আজ ৮ আগস্ট বুধবার সকাল ১১.৩০টার সময় ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যৌথভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও জাতিসত্তা মু্ক্তি সংগ্রাম পরিষদ। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে বান্দরবানে বিজিবি কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ এবং বিতর্কিত খাদেমুলকে ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে পুনঃনিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ না করলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সরকারের উদ্দেশ্যে হুঁশয়ারী দেন বক্তারা।
“ভূমি দস্যুদের আগ্রাসন রোধে ছাত্র-যুব শক্তি এক হও” শ্লোগানে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, ইউপিডিএফ-এর প্রতিনিধি অংগ্য মারমা, জাতিসত্তা মু্ক্তি সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল স্মৃতি চাকমা,ল্যাম্পপোষ্টের সংগঠক আফরোজা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়ান, মুন্ডা জাতিসত্তার প্রতিনিধি খুরশিদ পাহান এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা। সভা পরিচালনা করেন সুমেন চাকমা।
সমাবেশে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ বাংলাদেশেরই নাগরিক। তারা শান্তিপ্রিয় এবং খুবই বিনয়ী। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে লুটেরা দুর্নীতিবাজ বাঙালি শাসক শ্রেণী পাহাড়ি জনগণের উপরে সেনা শাসন জারি রেখেছে। পার্বত্য জনগণের সভা-সমাবেশ সংগঠন করার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে জাতিসত্তাসমূহকে নিশ্চিহ্ন কারার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর শেখ মুজিবর রহমানের সরকার পাকিস্তান আমলের শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল না করে একে অর্পিত সম্পত্তি আইন নাম দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও জমি আওয়ামী লীগ ও তাদের সাথে সম্পর্কিত লোকজন ভোগ দখল করেছে। ১৯৪৭ সনে দেশ ভাগের পর উর্দুভাষী জনগণ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কতিপয় উর্দুভাষী নেতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার অপরাধে ১৯৭২ সনে উর্দুভাষী জনগণের উপর হামলা চালানো হয়। তাদের জমি বাড়ি কেড়ে নেয়া হয়। অন্য দিকে সমতলে বসবাসরত সান্তাল, গারো, খাসিয়া, মুন্ডা, মনিপুরীসহ সংখ্যলঘু জনগণকে তাদের ভূমি থেকে গত ৪১ বছর ধরে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সংবিধানে জাতিসত্তার স্বীকৃতি না থাকায় সংখ্যলঘূ জাতি ও ভাষা-ভাষী জনগণের উপর এই শোষণ নির্যাতন জারি আছে। জনগণের নতুন সংবিধান, শ্রমিক কৃষকসহ সকল নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার ল্েয তাই আমাদের সংগ্রাম বেগবান হতে হবে।
মুন্ডা জাতিসত্তার প্রতিনিধি খুরশিদ পাহান বলেন, পার্বত্য চট্ট্রগ্রামে ভূমি নিয়ে যে সমস্যা সমতলেও একই সমস্যা। সরকারের অর্পিত সম্পত্তি আইন একটি মানুষ ঠকানোর আইন, যেটি শেষ বেলায় মানুষের হাতে পড়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ আবেদন করার কোন সুযোগ পায় নি। নঁওগা জেলাতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে আজো সংখ্যালঘু জনগণ খুন হচ্ছে। গত দুই মাসে চার জন মান্দা উপজেলায় সান্তাল জাতিগোষ্ঠির মানুষ খুন হয়েছে। সমতলে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন এবং অর্পিত সম্পত্তি যে সম্প্রদায়ের সম্পত্তি অর্পিত হয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সে সম্প্রদায়কে দেয়ার জোর দাবী জানান।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি নতুন কুমার চাকমা বলেন, থানচি সদরে ১০ একর এলাকা নিয়ে একটি বিওপি এবং ১৯ কিলোমিটারের মধ্যে বলিপাড়ায় ৫২ একর বিশাল এলাকা জুড়ে বিজিবি-র একটি ব্যাট্যালিয়ন সদর দপ্তর রয়েছে। এতৎ সত্ত্বেও উপজেলা সদরে প্রায় ৪০-৫০ একর জায়গার উপর নতুন একটি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের ল্েয ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাহাড়ি অধ্যুষিত ঐ জনবসতি এলাকা অধিগ্রহণ করা হলে কয়েক শত পরিবার বংশ পরম্পরার বাস্তুভিটা ও ভূমি থেকে উচ্ছেদের শিকার হবে। এ নিয়ে এলাকায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করা না হলে এলাকাবাসীর সামনে আন্দোলনে অবর্তীণ হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
যুব ফোরাম নেতা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনে চেয়ারম্যান হিসেবে বিতর্কিত বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে পুণঃনিয়োগ দানের প্রক্রিয়া পাহাড়ি জনগণের ভূমি জোর করে কেড়ে নেয়ার সরকারি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার যদি খাদেমূলকে নিয়োগদানের প্রক্রিয়া থেকে সরে না আসে, তাহলে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করবে।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি‘র রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।