বান্দরবানে নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট এলাকাবাসী

0
149

বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩

বান্দরবানে সেনা মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট ও ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে স্থানীয় এলাকাবাসী। সন্ত্রাসীরা সেনা-প্রশাসনের সহায়তায় প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন, চাঁদাবাজি ও স্থানীয় লোকজনের উপর একের পর এক হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল বান্দরবান জেলা শহরে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উপলক্ষে পিঠা উৎসব চলাকালে দিবাগত রাত তিনটার দিকে ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ নামধারী নব্যমুখোশ বাহিনীর সর্দার জয় বাবু তংচঙ্গ্যা, পুলু মং মার্মাসহ ৭/৮ জন দুর্বৃত্ত মাতাল অবস্থায় উজানী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তার উপর দলবদ্ধ হয়ে উৎসবে আসা লোকজনের উপর উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। এই ব্যাপারে তাদের নিষেধ করলেও তারা উৎসবে আসা স্থানীয়দের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এর প্রতিবাদ করলে পাশের সমিল থেকে গাছ এনে তারা কয়েকজনের উপর হামলা করে। পরে স্থানীয় থুইমে চিং মার্মাসহ কয়েক নারীর জামা কাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানী করে। এসময় স্থানীয়রা চিৎকার করলে তারা উৎসব আয়োজকদের প্রাননাশের হুমকি দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা কয়েকজন দুর্বৃত্তকে গণধোলাই দেয় বলেও জানা গেছে। পরে আতঙ্কে রাতেই উৎসব বন্ধ হয়ে যায়।

উক্ত ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল ২০২৩) নব্যমুখোশ সর্দার জয় বাবু তংচঙ্গ্যা, পুলু মং মার্মাসহ অজ্ঞাত ১০জনকে আসামী করে ম্য খ্যাইং প্রু মার্মা নামে এক ভুক্তভোগী নারী বান্দরবান সদর থানায় মামলা (নং-১২) দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।

মামলার অভিযোগপত্রে বাদী ম্য খ্যাইং প্রু মার্মা বলেন, জেলা শহরের পাড়াগুলোতে যেভাবে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নিয়ে আমাদের উপর হামলা করছে, উৎসব পালনে বাধা দিচ্ছে, তাতে শহরে বসবাস করতে পারবো কিনা আমরা শঙ্কিত।

অপরদিকে, এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জেলা শহরের উজানী ও মধ্যমপাড়ায় বসবাসরত ১৬৬ জন স্থানীয় পাড়াবাসীর স্বাক্ষরিত একটি স্বারকলিপি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, ব্রিগেড কমান্ডার (৬৯ ব্রিগেড) ও পুলিশ সুপারের কাছে প্রদান করা হয়েছে।

এই ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, উৎসবে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ব্যাপারে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, এখানে পাড়ার ভেতর আসছে সন্ত্রাসীরা। পাড়ায় কেউ ঘুম যেতে পারছেনা হুমকি দিচ্ছে, সামাজিক অনুষ্ঠান করতে পারছেনা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে পারছেনা, কেন এসব হচ্ছে বান্দরবানে। এদের প্রতিরোধ করতে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এছাড়া, গত মাসে গাড়ি পার্কিংকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীরা জেলা শহরের রাজারমাঠ এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও কেন্দ্রিয় মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক লক্ষীপদ দাশ এর বাসভবনে হামলা চালায় এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রাননাশের হুমকি প্রদান করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, উক্ত নব্যমখোশ দুর্বৃত্তরা সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে গত ৭ এপ্রিল ২০২৩ রোয়াংছড়ি খামতাং পাড়ায় ৮ বম পাড়াবাসীকে ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। এর একদিন আগে সন্ত্রাসীরা জুরভারাং পাড়া এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে তাদেরকে অপহরণ করেছিল। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ প্রদর্শিত হলেও প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো ‘দুই গ্রুপের গোলাগুলির’ নাটক সাজিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা চালায়। খুনি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.