বান্দরবানে লামায় ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরাদের চার সংগঠনের ত্রাণ বিতরণ

0
87

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

চার সংগঠনের ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠান। ছবি: প্রতিনিধি

বান্দরবানে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো কার্বারী পাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, হিল কালচারাল ফোরাম এবং খাগড়াছড়ি সচেতন জুম্ম শিক্ষার্থী ও যুবকবৃন্দ।

আজ শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি ২০২৩) ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আমির আব্বাস তাপু, হিল কালচারাল ফোরামের হিল কালচারাল ফোরামের সভাপতি প্যাশন চাকমা ও প্রতিনিধি রিতা চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের প্রতিনিধি সুদর্শন চাকমা এবং খাগড়াছড়ি সচেতন জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের প্রতিনিধি বাহাদুর ত্রিপুরা ও ক্রিস্টিনা চাকমা।

ত্রাণ বিতরণ সভায় মথি ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ও রংধজন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে উপস্থিত চার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

এ সময় অ্যাডভোকেট আমির আব্বাস তাপু তার বক্তব্যে বলেন, দেশের প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাহাড়িদের সাথে বিমাতৃসুলভ আচরণ করে যাচ্ছে। পাহাড়ে অনেক সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটে গেছে। অনেক পাহাড়ি ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেছে। এমনকি দেশান্তরী পর্যন্ত হয়ে গেছে। এমন নজির আমরা বান্দরবানে কিংবা সাজেক পর্যটন এলাকা দেখলে সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি। একদিক পর্যটন নাম দিয়ে ভূমিপুত্রদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, অন্যদিকে সেটেলারদের দৌরাত্মে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, সরকারের উচিত পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা এবং পাহাড়িদের সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের প্রতিনিধি সুদর্শন চাকমা বলেন, রাবার কোম্পানি এখানকার ভূমিপুত্রদের মেরে ফেলার জন্য কি-না করছে। জুমের আবাদি ফসল কেটে দেওয়া থেকে শুরু করে জুমভূমি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া, ঝিরি-ঝর্ণাতে বিষ মেশানো এবং সর্বশেষ গত মাসে ১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টায় বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং গবাদিপশু লুট করে নিয়ে গেছে। এটা সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশ আইনানুসারে দন্ডনীয় অপরাধ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরও প্রসাশন নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের প্রশাসন পাহাড়ি বান্ধব নয়।


তিনি আরো বলেন, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৯টিরও বেশি সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু প্রসাশন এখনো এর দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভূমিদস্যু লোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার পর্যটনের নাম দিয়ে আমাদেরকে ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে দিতে চায়। সরকার চায় আমরা অশিক্ষিত থাকি। লেখাপড়া না জানি। সেজন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা না করে পর্যটন তুলে দিচ্ছে। আমাদেরকে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

আরো বক্তব্য রাখেন হিল কালচারাল ফোরামের প্রতিনিধি রিতা চাকমা, খাগড়াছড়ি সচেতন জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার থেকে বাহাদুর ত্রিপুরা ও ক্রিস্টিনা চাকমা।

তারা বলেন, আপনাদের সাহসিকতা প্রশংসার যোগ্য। আপনারা সাহস নিয়ে ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে আপনাদের নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তারপরও আপনারা পিছপা হননি। আপনাদের আরো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আপনারা ভয় পাবেন না। আপনাদের সাথে আমরা রয়েছি।

সভাপতির বক্তব্য রংধজন ত্রিপুরা বলেন, আপনারা সবাই জানেন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিনিয়ত কিভাবে আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জুমভূমির ফলন কেটে দিয়েছিল, ঝিরিতে বিষ দিয়েছিল। সর্বশেষ তারা গত ১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১২-১টার সময় ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর-লুটপাট চালিয়েছে । এ ঘটনায় প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আমরা আমাদের ভূমির অধিকারের জন্য লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। এটা আমাদের পিতৃভূমি। আমরা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছি। ভূমি অধিকার ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই সংগ্রাম চলবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা আর ত্রাণের উপর নির্ভরশীল হতে চাই না। আপনারা যারা আমাদের সাথে ভূমি রক্ষার সংগ্রামে সামিল হয়েছেন, রাজপথে মিছিল, সমাবেশ করছেন আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ভূমি অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াইয়ে মাঠে আমাদের সাথে থাকবেন।

বক্তব্য শেষে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি চাল, আধা লিটার সয়াবিন তেল, আধা কেজি নাপ্পি, এক কেজি বাংলা সাবান ও একটি কম্বল দেওয়া হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.