
অনলাইন ডেস্ক ।। বান্দরবান পার্বত্য জেলার ৭ উপজেলা থেকে উন্নত শিক্ষা ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আদিবাসী শিশুদের কৌশলে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কৌশল গ্রহণ করেছে মৌলবাদী চক্র, আর এই চক্র গত ১০ বছরে জেলা থেকে শতাধিক শিশু পাচার করেছে।
জানা যায়, চলতি মাসের শেষ দিকে আলী কদমের অংওয়াই ম্রো কারবারিপাড়া, মেনপাতপাড়া, সিংরাও ম্রো মেম্বার পাড়ার ম্রো অধিবাসীরা একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সে সময় সাদা বাঙালী ওরফে মেনরিং ম্রো সেখানে উপস্থিত হয়ে শিশুদের পাচারের জন্য সহজ-সরল আদিবাসী অভিভাবকদের সংগঠিত করে।
আরও জানা গেছে, অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সে স্থানীয় ম্রো’দের ক্রামা ধর্মের শিক্ষা ও ম্রো’দের বর্ণমালা ফ্রিতে পড়াশোনা করাবে বলে প্রলোভন দেখায়। গত ২১ জানুয়ারি ম্রো’রা তার কথার ওপর ভিত্তি করে তার দেয়া ঠিকানায় শিশুদের নিয়ে কক্সবাজারের ঈদগাহ উপজাতীয় মুসলিম আদর্শ সংঘে উপস্থিত হয়। এ সময় তাদের নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়ে একই ওয়ার্ডের সাকনাও ম্রোর মেজ ছেলে মেননাও ম্রো’র ওপর। আর এসব কাজে অর্থ সহায়তা করেন কক্সবাজারের ঈদগাহ মডেল হাসপাতাল ও ডায়বেটিস কেয়ার সেন্টারের ডাঃ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। আরও জানা গেছে, স্থানীয় ম্রো অধিবাসীরা উপজাতীয় মুসলিম আদর্শ সংঘে উপস্থিত হয়ে দেখেন, ক্রামা ধর্মের চর্চা কিংবা ম্রো’দের বর্ণমালা কোনটিই নেই। অফিস ঘরের দেয়ালে দেয়ালে ইসলাম শিক্ষার বর্ণমালা এবং উপকরণ দেখতে পেয়ে তাদের মনে সন্দেহ হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় ম্রো নেতাদের সহযোগিতায় ১১ শিশুকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তারা জোরপূর্বক দুই শিশুকে রেখে দেয় প্রতিষ্ঠানটিতে।
এ ব্যাপারে অংওয়াই ম্রো কারবারি (পাড়াপ্রধান) জানান, অর্থ ও শিক্ষার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের শিশুদের ধর্মান্তরিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমাদের দুর্বলতা মনে করে এমন কাজ করলে ভবিষ্যতে অন্য মুসলমানদের ওপর ভরসা উঠে যাবে। স্থানীয়রা জানায়, এর আগে থানচি উপজেলা দুর্গম লিকড়ি এলাকা থেকে বিভিন্ন অনগ্রসর আদিবাসী গোষ্ঠীর ৩৪ শিশুকে নিয়ে যায় এই চক্র, তারা কোথায় আর কিভাবে আছে সেই তথ্য অজানা স্থানীয়দের। এই বিষয়ে কক্সবাজারের ঈদগাহ উপজাতীয় মুসলিম আদর্শ সংঘের সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে বলেন, আমি আপনাকে সব বলব, পরে কল করেন। পরে একাধিকবার কল করলেও তিনি প্রতিদেককের নম্বর ব্লক করেন।
আলীকদমের ৪ নং কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাইপু ম্রো বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পারি গত ২১ জানুয়ারি, তাদের সঙ্গে আমি অনেকবার যোগাযোগ করেছি কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সাক্ষাত না করে নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি জেলা শহরের অতিথি বোডিং থেকে বৌদ্ধ অনুসারী ৩৩ আদিবাসী শিশুকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় গর্ডেন ত্রিপুরা ওরফে রুবেল, ঢাকার দারুল এহসান মাদ্রাসার ছাত্র আবু হোরাইয়া এবং শ্যামলী এলাকার আবদুল গণিকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা শিশুদের জেলার থানচির বলিপাড়া এলাকা থেকে আনা হয়। শিশুদের ঢাকায় ধানমণ্ডি আদর্শ মদিনা স্কুলে ভর্তির কথা বলে নিয়ে আসে।
আরও জানা গেছে, ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শহরের হাবিব আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে ১৬ শিশুকে উদ্ধার ও মোহন ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধারণা করা হয় ঢাকায় কোন মাদ্রাসায় পাচারের জন্য এই শিশুদের নিয়ে আসা হয়।
২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চিম্বুক পাহাড় থেকে ১৯ ত্রিপুরা শিশুকে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় পাচারকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ী ছাত্ররা ৬ জনকে উদ্ধার করে ফকিরাপুলের একটি বাসের কাউন্টার থেকে। আরও বাকি ১৩ শিশু ঢাকায় আসার পথে চট্টগ্রামের বাস থেকে নেমে পালিয়ে যায়।
‘১৬ সালের ১ জানুয়ারি জেলা শহরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে ৪ আদিবাসী শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। চার শিশুকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টার অভিযোগে বাসস্টেশন এলাকার বাসিন্দা আবু বকর ওরফে মংশৈ প্রু ত্রিপুরা এবং মোঃ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।
এই ব্যাপারে আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ রকিব উদ্দিন জানান, এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ করা হয়নি, অভিযোগ পেলে আমরা আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ